রাস্তায় বেরোলে মাথার উপর চড়া রোদ—এটা খুব স্বাভাবিক দৃশ্য। আর রোদের মধ্যে দাঁড়ালে ছায়া পড়বে, সেটাও জানা কথা। কিন্তু ভাবুন তো, রোদে দাঁড়িয়ে আছেন অথচ আপনার কোনও ছায়া নেই! অবাক লাগছে? ঠিক এই অভিজ্ঞতারই সাক্ষী থাকতে চলেছে কলকাতা এবং বাংলার একাধিক জেলা।
২০২৫ সালে দু’বার ‘জিরো শ্যাডো ডে’ বা ছায়াহীন দিন দেখবে শহর কলকাতা। অর্থাৎ, সেই সময় সূর্য ঠিক মাথার উপর অবস্থান করবে বলে কোনও উল্লম্ব বস্তুর ছায়া পড়বে না। একেবারে কয়েক মিনিটের এই বিরল মুহূর্ত দেখতে পাবেন শহরবাসী।
কবে ছায়াহীন হবে কলকাতা?
ভারতের সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে,
- ৫ জুন সকাল ১১টা ৩৪ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে
- ৭ জুলাই সকাল ১১টা ৪১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে
এই দুই দিনে কলকাতায় ঘটবে জিরো শ্যাডো ডে।
কেন পড়বে না ছায়া?
এই ঘটনার পেছনে রয়েছে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়, বিষুব রেখার আশেপাশে যখন সূর্যের অবস্থান একেবারে মাথার উপরে হয়, তখন উল্লম্ব কোনও বস্তুর ছায়া তার পায়ের নিচেই থাকে। ফলে সেই ছায়া আর আলাদা করে চোখে পড়ে না—তাই মনে হয় যেন ছায়া নেই।
তবে এই ছায়াহীন মুহূর্ত বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। মাত্র ১ থেকে দেড় মিনিটের মতো সময় এই অবস্থা বজায় থাকে। এই সময়ের মধ্যে রোদে দাঁড়ালে, নিজের ছায়া দেখতে পাবেন না কেউই।
অন্যান্য জেলার তারিখ
শুধু কলকাতা নয়, পশ্চিমবঙ্গের আরও বহু জেলাতেই দেখা যাবে এই ছায়াহীন মুহূর্ত। নিচে রইল জেলার ভিত্তিতে তারিখ ও সময়ের তালিকা:
নিচে জেলার ভিত্তিতে ছায়াহীন মুহূর্তের দিন ও সময় দেওয়া হল—
- কলকাতায় এই বিরল ঘটনা দেখা যাবে ৫ জুন সকাল ১১টা ৩৪ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে এবং ৭ জুলাই সকাল ১১টা ৪১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে। বর্ধমানে ১৪ জুন সকাল ১১টা ৩৮ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড এবং ২৮ জুন সকাল ১১টা ৪১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে। খড়গপুরে ৩ জুন সকাল ১১টা ৩৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড এবং ৯ জুলাই সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডে।
- মায়াপুরে ১৯ জুন সকাল ১১টা ৩৭ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড এবং ২৩ জুন সকাল ১১টা ৩৮ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে। ডায়মন্ড হারবারে ২ জুন সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট ১০ সেকেন্ড এবং ১০ জুলাই সকাল ১১টা ৪২ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে। কৃষ্ণনগরে ১৭ জুন সকাল ১১টা ৩৬ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড এবং ২৫ জুন সকাল ১১টা ৩৮ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে।
- হলদিয়ায় ১ জুন সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট ২৯ সেকেন্ড এবং ১১ জুলাই সকাল ১১টা ৪৩ মিনিট ১০ সেকেন্ডে। মেদিনীপুরে ৪ জুন সকাল ১১টা ৩৯ মিনিট ১৭ সেকেন্ড এবং ৮ জুলাই সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে। ব্যারাকপুরে ৭ জুন সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট ১৯ সেকেন্ড এবং ৫ জুলাই সকাল ১১টা ৪১ মিনিট ৪ সেকেন্ডে।
- বারুইপুরে ৩ জুন সকাল ১১টা ৩৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ড এবং ৯ জুলাই সকাল ১১টা ৪১ মিনিট ৩ সেকেন্ডে। দিঘায় ২৯ মে সকাল ১১টা ৩৭ মিনিট ১০ সেকেন্ড এবং ১৪ জুলাই সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে। পুরুলিয়ায় ১৬ জুন সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট ১৪ সেকেন্ড এবং ২৭ জুন সকাল ১১টা ৪৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে।
- কল্যাণীতে ১০ জুন সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড এবং ২ জুলাই সকাল ১১টা ৪০ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে। হাওড়ায় ৮ জুন সকাল ১১টা ৩৪ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড এবং ৪ জুলাই সকাল ১১টা ৩৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডে এই জিরো শ্যাডো ডে দেখা যাবে।
এই দিন কী করবেন?
এই বিরল প্রাকৃতিক দৃশ্য নিজের চোখে দেখার জন্য রাস্তায় বেরোনো যেতে পারে। তবে চোখে রোদ আটকানোর চশমা এবং পর্যাপ্ত জল সঙ্গে রাখাই ভালো। আপনি যদি ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসেন, তবে এটি একটি দারুণ সুযোগ—ক্যামেরায় তুলে রাখুন এই ছায়াহীন মুহূর্ত।
পরবর্তী বার এমন মুহূর্ত কবে আসবে, তা নির্ভর করবে আপনার অবস্থান ও সময়ের উপর। তাই সুযোগ হাতছাড়া না করে ঠিক সময়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনুভব করুন প্রকৃতির এই অদ্ভুত সৌন্দর্য!