গঙ্গায় নিঃশব্দ গণহত্যা! বিপন্ন ৬ হাজার ডলফিন, অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে

বিপন্ন ৬ হাজার ডলফিন

ভারতের হৃদয়ে বয়ে চলা পবিত্র গঙ্গা নদী আজ যেন কান্নার প্রতীক! এক সময় যেখানে হাজার হাজার ডলফিনের খেলা নদীর বুকে প্রাণ ফিরিয়ে আনত, আজ সেই নদীতেই নিঃশব্দে চলেছে গণহত্যা। হ্যাঁ, নিঃশব্দ! কারণ যারা মরছে তারা কথা বলতে পারে না, চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাতে পারে না—তারা ডলফিন!

ভারতের জাতীয় জলজ প্রাণী গাঙ্গেয় ডলফিন আজ বিপন্ন প্রজাতির তালিকায়। সংখ্যায় মাত্র ৬ হাজার ৩২৪! আর এই সংখ্যা প্রতি বছরই কমছে, ধীরে ধীরে তারা হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অগোচরে।

তারা সবার মতো নয়—চোখে দেখে না, শব্দেই বাঁচে :

গঙ্গায় নিঃশব্দ গণহত্যা

গাঙ্গেয় ডলফিন কোনো সাধারণ প্রাণী নয়। এরা চোখে দেখতে পায় না বললেই চলে। ঘোলা পানির নিচে সাঁতার কাটে আর প্রতিধ্বনির সাহায্যে পথ খুঁজে নেয়। এমনই এক অনন্য সৃষ্টি, যার অস্তিত্ব আজ মানুষের কারণে হুমকির মুখে।

জরিপে আতঙ্কের চিত্র :

২০২১ থেকে ২০২৩—এই সময়ের মধ্যে ভারতের ১০টি রাজ্যের ৫৮টি নদীতে জরিপ চালায় ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট। দেখা যায়, সব মিলিয়ে মাত্র ৬,৩২৭টি নদী-ডলফিন বেঁচে আছে। এর মধ্যে মাত্র ৩টিই সিন্ধু ডলফিন, বাকি সব গাঙ্গেয়।

ডলফিন মরছে কেন?

  • মাছ ধরার জালে আটকে মৃত্যু
  • ডলফিনের মাংস ও তেল ব্যবহার হয় মাছ ধরার টোপ হিসেবে
  • অনেক সময় জেলেরা ইচ্ছাকৃতভাবেই হত্যা করে
  • ক্রুজ চলাচলের শব্দে তারা বিভ্রান্ত হয়, নৌকায় ধাক্কা খেয়ে মারা যায়
  • আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮০ সাল থেকে ৫০০-র বেশি ডলফিন মারা গেছে! এবং প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে, কারণ বহু মৃত্যু গোপন রাখা হয়।

প্রজনন হারও হতাশাজনক :

ডলফিন মরছে কেন?

ছয় থেকে দশ বছর বয়সে স্ত্রী ডলফিন প্রজননক্ষম হয়। তাও আবার দুই-তিন বছর অন্তর মাত্র একটি বাচ্চা, ফলে হারানো ডলফিনের সংখ্যা পূরণ হওয়ার কোনো সুযোগই নেই।

ক্রুজ ট্যুরিজম: ধ্বংস ডেকে আনছে বিলাসিতা

গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রে আজ বিলাসবহুল জাহাজের আনাগোনা লেগেই আছে। অথচ, শব্দ-সংবেদনশীল এই ডলফিনেরা এমন শব্দে দিক হারিয়ে ফেলে। পরিবেশবিদ রবীন্দ্র কুমার সিনহা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—এভাবে চলতে থাকলে গাঙ্গেয় ডলফিনের পরিণতিও হবে ইয়াংজি নদীর বাইজি ডলফিনের মতো—যারা আজ বিলুপ্ত!

২০০৯ সালে গাঙ্গেয় ডলফিনকে জাতীয় জলজ প্রাণী ঘোষণা করে ভারত সরকার। ২০২০ সালে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা এবং ২০২৪ সালে গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কিছুটা হলেও চেষ্টা চলছে সংরক্ষণের।

প্রতিবছর যতটা না জন্ম নিচ্ছে, তার চেয়ে ঢের বেশি মারা যাচ্ছে এই ডলফিনেরা। যদি এখনই সকলে মিলে জেগে না উঠি, তাহলে হয়তো আগামী প্রজন্মের কাছে এই ‘গাঙ্গেয় ডলফিন’ শুধুই একটি ছবি, একটি গল্প হয়ে থাকবে।

RIma Sinha

Rima Sinha is a professional journalist and writer with a strong academic background in media and communication. She holds a Bachelor of Arts from Tripura University and a Master’s degree in Journalism and Mass Communication from Chandigarh University. With experience in reporting, feature writing, and digital content creation, Rima focuses on delivering accurate and engaging news stories to Bengali readers. Her commitment to ethical journalism and storytelling makes her a trusted voice in the field.

Recent Posts