মাত্র ২৮ বছর বয়সে যখন একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, দু’বছরের সন্তান আর বিয়ের রঙিন স্বপ্ন সামনে, তখনই যেন জীবনটা যেন থমকে গেল ব্রিটেনের তরুণী জর্জিয়া-লি গার্ডিনারের। এতদিন যে সমস্যাকে তিনি সাধারণ অ্যাসিডিটি ভেবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন, চার মাস পর জানা গেল তা এক মারণব্যাধি – স্টমাক ক্যানসার। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন, হয়তো আর এক বছরই বাঁচবেন জর্জিয়া।
গত বছর ক্রিসমাসের সময় থেকেই জর্জিয়ার শরীরে অস্বস্তি শুরু হয়। ঘন ঘন পেটে ব্যথা, কিছু খেলেই বমি হয়ে যাওয়া, আর দ্রুত ওজন কমে যাওয়া – এই লক্ষণগুলোই তাঁকে চিকিৎসকের দ্বারস্থ করে। প্রথম কয়েক মাস তাঁকে বুক জ্বালা এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সাধারণ ওষুধ ‘ল্যানসোপ্রাজল’ (Lansoprazole) দেওয়া হয়। একাধিক ডাক্তার দেখানো সত্ত্বেও সঠিক রোগ নির্ণয় হতে সময় লাগে।
চার মাস পর এক চিকিৎসক জর্জিয়ার শরীরে একটি টিউমারের অস্তিত্ব টের পান। স্ক্যান করার পর নিশ্চিত হওয়া যায়, তিনি গ্যাস্ট্রিক অ্যাডেনোকার্সিনোমা (Gastric Adenocarcinoma) অর্থাৎ পাকস্থলীর ক্যানসারের এক মারাত্মক রূপে আক্রান্ত।
“আর এক বছর বাঁচবেন!” -জানিয়ে দেন চিকিৎসক
ক্যানসারের খবর শুনেও যতটা না ভেঙে পড়েছিলেন জর্জিয়া, তার চেয়ে বেশি ভেঙে পড়েন চিকিৎসকের হতাশাজনক ভবিষ্যদ্বাণী শুনে। সেই চিকিৎসক তাঁকে জানান যে, ক্যানসার ইতিমধ্যেই বেশ ছড়িয়ে পড়েছে এবং এর কোনো নিরাময় নেই। তিনি মেরেকেটে আর এক বছর বাঁচবেন বলেও জানিয়ে দেন।
জর্জিয়া জানান, তিনি খেতে খুব ভালোবাসতেন, কিন্তু তাঁর শরীর যেন খাবার গ্রহণ করতে পারছিল না। কিছু খেলেই বমি হয়ে যেত এবং পেটের উপরের অংশে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করতেন। রোগ নির্ণয়ের জন্য তাঁর এন্ডোস্কোপি করা হয়, যেখানে গলা দিয়ে একটি ক্যামেরা বসানো যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে পাকস্থলীর ভেতরের অবস্থা পরীক্ষা করা হয়।
গত ১৩ জুন সেন্ট জেমস ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে হবু স্বামী ক্যালামকে নিয়ে গিয়েই জর্জিয়া তাঁর ক্যানসারের কথা জানতে পারেন।

“ওই ঘরের মধ্যেই আমার গোটা পৃথিবী খান খান হয়ে গেল,” আবেগাপ্লুত জর্জিয়া বলেন। “যখন জানলাম কোনো নিরাময় নেই, শুধু আমার ছেলের কথা ভাবছিলাম। আমার ২ বছরের ছেলে আছে। এমনটা কী করে হতে পারে?”
প্রথমে ক্যানসারের কথা বিশ্বাসই করতে পারেননি জর্জিয়া। কিন্তু যখন বুঝলেন চিকিৎসক সত্যি বলছেন, প্রথম পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারেননি। জর্জিয়া জানিয়েছেন, ওই পাঁচ মিনিটে সব ধরনের আবেগ সঞ্চারিত হয় তাঁর মনে। স্টেজ ৪ ক্যানসার, কতদিন বাঁচবেন – কিছুই বুঝতে পারছিলেন না তিনি।
শেষটা উপভোগ করার আকাঙ্ক্ষা :
তবে জীবনের শেষ দেখতে চান জর্জিয়া। তাই কেমোথেরাপি শুরু হয়েছে তাঁর। চিকিৎসকদের মতে, এতে কিছু দিনের জন্য মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে। জীবনের এই সায়াহ্নে এসে জর্জিয়ার উপলব্ধি, “জীবন উপভোগ করা উচিত প্রত্যেকের। জীবন খুব সুন্দর। আমরা অযথা দুশ্চিন্তা করেই কাটিয়ে দিই। কাল কী হবে, কেউ জানি না। বেঁধে বেঁধে থাকুন। জীবনকে আপন করে নিন।”
জর্জিয়ার এই লড়াই আবারো মনে করিয়ে দেয় যে, শরীরের সামান্যতম অস্বস্তিও অবহেলা করা উচিত নয়। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা অনেক সময় জীবন বাঁচাতে পারে।