দীর্ঘ ৪১ বছর পর, ভারতীয় মহাকাশচারী আবারও পাড়ি দিচ্ছেন মহাশূন্যে। মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে অ্যাক্সিওম স্পেসের চতুর্থ মানব মহাকাশ ফ্লাইট, অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের মাধ্যমে। ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। তিনি এই মিশনের পাইলট।
ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। মহাকাশ যান উৎক্ষেপণের দিন ঠিক করা হয়েছে ১১ জুন। তাঁর সঙ্গে থাকবেন মিশন কমান্ডার পেগি হুইটসন, হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞ টিবর কাপু এবং পোল্যান্ডের স্লাওস উজনানস্কি-উইসনিউস্কি।
২৮ ঘণ্টার রোমাঞ্চকর যাত্রা:
উৎক্ষেপণের পর, প্রায় ২৮ ঘণ্টার রোমাঞ্চকর যাত্রা শেষে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ‘ডক’ করবে অ্যাক্সিওম-৪। পূর্বে ৮ জুন এই অভিযান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, গত সপ্তাহে তা দুই দিন পিছিয়ে ১০ জুন করা হয়েছিল, আবার এখন টা আরো পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) জানিয়েছে, নভোচারীরা স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটে করে কক্ষপথের পরীক্ষাগারে যাবেন, তবে আইএসএসে পাঠানোর জন্য ১১ জুন ২০২৫ তারিখে নির্ধারিত অ্যাক্সিওম -৪ র উৎক্ষেপনের স্থগিত করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন:

১৯৮৪ সালে রাশিয়ার সয়ুজ মিশনে রাকেশ শর্মার ঐতিহাসিক মহাকাশ যাত্রার ৪১ বছর পর অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের মাধ্যমে ভারতীয় কোনও মহাকাশচারী আবারও মহাকাশে প্রত্যাবর্তন করছেন। এই ঘটনা ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের পুনঃব্যবহারযোগ্য ফ্যালকন ৯ রকেটের উপরে ড্রাগন মহাকাশযানটি যুক্ত করতে দেখা গেছে। উৎক্ষেপণের আগে স্পেসএক্স শনিবার ফ্যালকন ৯ এবং ড্রাগন মহাকাশযানকে ফ্লোরিডার লঞ্চ প্যাডে পাঠানো হয়েছে।
মিশনের প্রস্তুতি:
কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেনের আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে যাত্রা মহাকাশ ক্ষেত্রে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। মহাকাশযানে করে তাঁর মহাশূন্যে পাড়ি দেওয়া বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকার মতো বিষয়ে তাঁর দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, যা ভারতের নিজস্ব মানব মহাকাশ মিশন, ‘গগনযান’-এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
গত সপ্তাহে ইসরোর চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন মহাকাশযাত্রার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে অ্যাক্সিওম স্পেস পরিদর্শন করেছিলেন। শুক্লা এবং অন্য তিন নভোচারী তাঁদের মহাকাশ ভ্রমণের প্রস্তুতির জন্য ২৫ মে থেকে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন এবং প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। অ্যাক্সিওম স্পেস তাঁদের প্রস্তুতি নিয়ে একটি ভিডিয়োও শেয়ার করেছে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ১৪ দিনের অবস্থান:
এই অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের ক্রু-রা ১৪ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করবেন। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্কুল শিক্ষার্থী এবং মহাকাশ ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে এএক্স৪ ক্রুদের কথা বলার সম্ভাবনা রয়েছে। অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের ক্রুরা লঞ্চের আগে গত সপ্তাহের শুরুতে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন।
সেখানে তাঁরা বলেছিলেন, “আমরা লঞ্চের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি, আমরা সমস্ত প্রশিক্ষণ শেষ করেছি।” মিশনে সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় ক্রু সম্পর্কে কমান্ডার হুইটসন বলেছিলেন, এই দলটি মহাকাশ ক্ষেত্রে ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে’ আরও উৎসাহিত করবে।

কিন্তু ফের একবার সেই যাত্রা পিছিয়ে গেল। স্পেসএক্স জানিয়েছে, রকেটের ‘স্ট্যাটিক ফায়ার’ টেস্টের পর, বুস্টার পর্যায়ে লিক্যুইড অক্সিজেন (LOx) লিকেজের সমস্যা ধরা পড়ার কারণে মিশনটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।এক্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে স্পেসএক্স জানায়, ‘লিক্যুইড অক্সিজেন লিকএর সমস্যাটি মেরামতের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন। তাই আগামিকালের ফ্যালকন-৯ উৎক্ষেপণ আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। মেরামতের কাজ শেষ হলে এবং রেঞ্জ নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর নতুন উৎক্ষেপণের তারিখ জানানো হবে।’
শুভাংশু শুক্লার এই মহাকাশ যাত্রা শুধুমাত্র তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এই মিশন ‘গগনযান’-এর স্বপ্নকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে, এবং ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানগুলির জন্য এক মজবুত ভিত্তি স্থাপন করবে।