এক পা নিয়ে দানব ঢেউ জয়! সার্ফিং বিশ্বে চমক ‘পেগলেগ’ বেনেটের

এক পা নিয়ে দানব ঢেউ জয়! সার্ফিং বিশ্বে চমক ‘পেগলেগ’ বেনেটের

জন্ম থেকেই একটি পা ছিল না, তবুও দানব ঢেউয়ের মুখোমুখি হয়ে জয় ছিনিয়ে নিচ্ছেন ‘পেগলেগ’ বেনেট l ৫৫ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ সার্ফার প্রমাণ করে দিয়েছেন—শরীরী প্রতিবন্ধকতা কখনওই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

জন্ম থেকেই পায়ের ত্রুটি

বেনেট জন্মেছিলেন বাঁ পায়ের গোড়ালির হাড় ছাড়াই, বিকৃত ও বাঁকা পা নিয়ে। চিকিৎসকরা তখন তাঁর পরিবারকে বলেন, যদি ওই পা কেটে ফেলা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তাঁর জীবনযাত্রা অনেক সহজ হবে। সেই মতেই শৈশবে পায়ের অস্ত্রোপচার হয়।

বেনেট জন্মেছিলেন বাঁ পায়ের গোড়ালির হাড় ছাড়াই, বিকৃত ও বাঁকা পা নিয়ে।

‘পেগলেগ’ থেকে বিশ্ব সার্ফিংয়ের তারকা

শৈশবে পানির প্রতি প্রবল আকর্ষণ থেকেই সার্ফিংয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয় বেনেটের। তাঁর বাবাও ছিলেন একজন দক্ষ সাঁতারু। সেই জিন থেকেই সম্ভবত সমুদ্রের ঢেউয়ের প্রতি প্রেম তৈরি হয় তাঁর।

২০১৬ সালে নিজের ডাকনাম ‘পেগলেগ’ (এক পা-ওয়ালা) আইনি নাম হিসেবে গ্রহণ করেন বেনেট। তিনি বলেন, “সাগরই আমার সুখের ঠিকানা। যখন ঢেউয়ের উপর দাঁড়াই, তখন আর কিছু মনে থাকে না—শুধু আমি আর সেই ঢেউ।”

কৃত্রিম পা থেকে সাফল্যের নতুন দিগন্ত

বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে (NHS) অনুরোধ করে তিনি অবশেষে একটি ‘বিচ অ্যাক্টিভিটিজ লেগ’ বা সমুদ্রতটের কার্যকলাপ উপযোগী কৃত্রিম পা পান। এরপর নিজের মতো করে সেটিকে উন্নত করেন—পায়ের মধ্যে ছিদ্র করে আরও কার্যকর করে তোলেন।

বর্তমানে তাঁর পা তৈরি হয়েছে কার্বন ফাইবার ও টাইটানিয়াম দিয়ে। এই কৃত্রিম পায়ে টাইটানিয়ামের গাঁটে রয়েছে বিশেষ অ্যাঙ্কল জয়েন্ট, যা সার্ফিংয়ের সময় তাঁকে আরও ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে।

পৃথিবীর প্রতিটি ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই

বেনেট সার্ফিং করেছেন ইন্দোনেশিয়া, হাওয়াই, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশে। এমনকি হিমশীতল আর্কটিক সার্কেলেও তিনি সার্ফিং করেছেন। পর্তুগালের বিখ্যাত দানব ঢেউয়ের জায়গা ‘নাজারে’তেও তিনি সফলভাবে সার্ফ করেছেন।

প্যারা-সার্ফিংয়ের পথপ্রদর্শক

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে শুরু হয় প্রথম অ্যাডাপটিভ সার্ফিং ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, যা প্যারা-সার্ফিংয়ের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

আজ প্যারা-সার্ফিং বিশ্বের দ্রুততম সম্প্রসারণশীল খেলা। বেনেটের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড প্যারা-সার্ফিং দল বর্তমানে বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে। তিনি সেরিব্রাল পালসি, এমএস, দৃষ্টিহীন ও অন্যান্য প্রতিবন্ধী সার্ফারদের কোচিং দিয়ে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন।

কৃত্রিম পা থেকে সাফল্যের নতুন দিগন্ত

বেনেট বলেন, “আমি প্রতিবন্ধকতায় বিশ্বাস করি না, আমি বিশ্বাস করি—আমরা পারি।”

অলিম্পিক স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের আশার আলো

প্যারা-সার্ফিং ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস প্যারালিম্পিকে জায়গা না পেলেও, ২০৩২ ব্রিসবেন গেমসে অন্তর্ভুক্তির জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এতে খেলোয়াড়দের জন্য বাড়তি তহবিল ও সুযোগের দ্বার খুলে যেতে পারে।

‘পেগলেগ’ বেনেটের গল্প আমাদের শেখায়, সাহস, নিষ্ঠা আর অদম্য ইচ্ছা থাকলে কোনও ঢেউই জীবন থেকে আমাদের সরিয়ে রাখতে পারে না। তাঁর অনুপ্রেরণাদায়ক যাত্রা শুধু প্যারা-সার্ফারদের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts