বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা তাজমহল নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। এই বিতর্কে এবার নতুন মোড় এনেছেন নিজেকে মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের ষষ্ঠ প্রজন্মের উত্তরাধিকারী বলে দাবি করা প্রিন্স ইয়াকুব হাবিবুদ্দিন তুসি। সম্প্রতি তিনি আদালতে একটি ডিএনএ রিপোর্ট জমা দিয়েছেন, যার মাধ্যমে তিনি তাজমহলের উপর নিজের মালিকানা দাবি প্রমাণ করতে চেয়েছেন।
হায়দ্রাবাদে বসবাসকারী প্রিন্স তুসি নিজেকে মুঘল শাসকদের বংশধর বলে পরিচয় দেন এবং দাবি করেন, তাঁর পূর্বপুরুষরা হলেন সম্রাট আকবর, শাহজাহান ও আওরঙ্গজেব। শুধু ইতিহাসের পাতায় নয়, আজকের ভারতেও তিনি নিজেকে রাজকীয় মর্যাদার ধারক বলে মনে করেন। বর্তমানে তিনি আওরঙ্গজেবের সমাধির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবেও কাজ করছেন।
রাজকীয় পরিচয় ও ঐতিহ্যের দাবি

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটলেও, বিভিন্ন রাজবংশের উত্তরসূরিরা এখনও নিজেদের ঐতিহ্য এবং পূর্বপুরুষদের স্মৃতিকে ঘিরে সামাজিক ও রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে আসেন। মহারাষ্ট্রের গায়কোয়াড় রাজপরিবার কিংবা রাজস্থানের দিয়া কুমারীর মতো ব্যক্তিত্বরা যেমন এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তেমনি প্রিন্স তুসিও ঐতিহাসিক সম্পত্তি ও স্থাপনার উপর নিজের দাবি তুলে ধরে বারবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছেন।
তাজমহল বিতর্কে তুসির দাবি
তাজমহলকে ঘিরে তুসির দাবি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে আলোচিত। তিনি দাবি করেন, এই স্মৃতিসৌধ তাঁর পূর্বপুরুষ সম্রাট শাহজাহান নির্মাণ করেছিলেন তাঁর স্ত্রী মমতাজ মহলের জন্য, এবং সেই সূত্রেই তাজমহলের প্রকৃত মালিকানা তাঁর। এই দাবি তিনি বহু বছর আগেই উত্থাপন করেছিলেন, তবে সম্প্রতি আদালতে ডিএনএ রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর এটি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।

২০১৯ সালে তাজমহল নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে পৌঁছায় যখন তুসি প্রকাশ্যে রাজস্থানের রাজকুমারী দিয়া কুমারীকে চ্যালেঞ্জ জানান। দিয়া কুমারী দাবি করেছিলেন, তাঁদের কাছে তাজমহল সম্পর্কিত প্রাচীন নথিপত্র রয়েছে। এর জবাবে তুসি সরাসরি বলেন, “যদি তোমার কাছে তোমার পদখানায় নথিপত্র থাকে, তাহলে দেখাও। যদি তোমার ভেতরে এক ফোঁটা রাজপুত রক্ত থাকে, তাহলে সেই নথিপত্র দেখাও।”
ভবিষ্যৎ কী?
প্রিন্স তুসির এই দাবি ভারতের রাজনৈতিক ও আইনি পরিমণ্ডলে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। তবে এটুকু নিশ্চিত, ঐতিহাসিক স্থান ও রাজবংশের উত্তরাধিকার নিয়ে বিতর্ক এবং আবেগ – দুটিই এখনও এই উপমহাদেশে গভীরভাবে প্রোথিত।