তুষারে মোড়া পৃথিবীর শীতলতম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা, এবার নতুন করে সংবাদের শিরোনামে। সম্প্রতি রাশিয়ার দাবি, অ্যান্টার্কটিকার বরফের নিচে আনুমানিক ৫৫ হাজার ১১০ কোটি ব্যারেল তেলের বিশাল ভান্ডার আবিষ্কৃত হয়েছে। এই পরিমাণ তেল গত ৫০ বছরে উত্তর সাগর থেকে উত্তোলিত তেলের প্রায় দশ গুণ এবং সৌদি আরবের বর্তমান মজুত তেলের দ্বিগুণ। এই ‘তরল সোনা’ ঘিরেই কি বিশ্বজুড়ে শুরু হতে চলেছে এক নতুন ‘তেল যুদ্ধ’?
রাশিয়ার অনুসন্ধান সংস্থা রসজিও (Rosgeo)-এর ভূতাত্ত্বিকরা ওয়েডেল সাগর অঞ্চলে এই তেলের সন্ধান পেয়েছেন। কিন্তু অ্যান্টার্কটিকাকে সুরক্ষিত রাখতে ১৯৫৯ সালের অ্যান্টার্কটিক চুক্তি (Antarctic Treaty) অনুযায়ী, এখানে শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণার অনুমতি আছে; সামরিক কার্যকলাপ বা প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ নিষিদ্ধ। এই চুক্তিতে ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশ স্বাক্ষর করেছে।
তবে, এই আবিষ্কারের পর থেকে চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, তেল আবিষ্কৃত অঞ্চলটি তাদের ‘অধিকৃত’। চিলি এবং আর্জেন্টিনাও একই অঞ্চলের দাবিদার।

অন্যদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে চীনের জোট পশ্চিমা দেশগুলির উদ্বেগ বাড়িয়েছে, কারণ তারা মনে করছে রাশিয়া বৈজ্ঞানিক গবেষণার আড়ালে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তেল ও গ্যাস খুঁজছে। পশ্চিমি দেশগুলি আশঙ্কা করছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাশিয়া ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অ্যান্টার্কটিকার এই বিপুল তেল ভান্ডারকে নিজেদের দখলে নিতে চাইছে।
রাশিয়া অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক। তবে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সুরক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে অ্যান্টার্কটিকার এই তেল ভান্ডার নিঃসন্দেহে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার এক নতুন উৎস হয়ে উঠতে পারে। এই ‘তরল সোনা’ ঘিরে দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা না সংঘাত দেখা যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।