ভারতীয় রাস্তায় এক সময়ের “রাজা” বলে পরিচিত সাদা অ্যাম্বাসেডর গাড়ি আবার ফিরছে, তবে একদম নতুন রূপে—ইলেকট্রিক মডেলে। হিন্দুস্তান মোটরস এই ক্লাসিক আইকনিক গাড়িটিকে ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ২০২৫ সালেই নতুন জেনারেশনের জন্য এটি বাজারে আসতে পারে।
অ্যাম্বাসেডর: স্মৃতির পাতায় এক স্বর্ণালী নাম
সত্তরের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত অ্যাম্বাসেডর কেবল একটি গাড়ি ছিল না—সমাজের মর্যাদা, আভিজাত্য ও সরকারি ক্ষমতার প্রতীক ছিল এই মডেল। সরকারি আধিকারিক, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীদের শোভা বাড়াত এই গাড়ি। তখনকার দিনে ভারতীয় রাস্তায় অ্যাম্বাসেডরের প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে গেলে ছিলই না।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরপাড়ার হিন্দুস্তান মোটরস কারখানা থেকে শেষ অ্যাম্বাসেডর গাড়িটি বের হয়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে এই নাম হারিয়ে যেতে থাকে বাজার থেকে।
এবার ফিরছে ইলেকট্রিক রূপে
সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, হিন্দুস্তান মোটরস এবার অ্যাম্বাসেডর গাড়িটিকে একেবারে ইলেকট্রিক মডেলে তৈরি করতে চলেছে, অর্থাৎ আর পেট্রোল বা ডিজেলের ঝামেলা নয়। আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণে পরিবেশ-বান্ধব এবং শক্তিশালী বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত অ্যাম্বাসেডর আসছে আমাদের সামনে।
এই লক্ষ্যে হিন্দুস্তান মোটরস একটি ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে হিন্দুস্তান মোটরসের অংশীদারিত্ব থাকবে ৫১ শতাংশ এবং ইউরোপীয় সংস্থার ৪৯ শতাংশ, ফলে নিয়ন্ত্রণ থাকবে ভারতের হাতেই।
পুরনো কারখানাতেই হতে পারে উৎপাদন
সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানিয়েছেন, সব কিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে উত্তরপাড়া কারখানাতেই আবার শুরু হবে নতুন অ্যাম্বাসেডরের উৎপাদন। এটি শুধু এক নতুন গাড়ির জন্ম নয়, বরং ভারতীয় প্রযুক্তি এবং ঐতিহ্যের এক পুনর্জাগরণ।

বাজার থেকে হারিয়ে গেল কেন?
এক সময় অ্যাম্বাসেডর গাড়ি যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, নব্বইয়ের দশকে মারুতি গাড়ির আগমনের পর বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। মারুতি ছিল সস্তা, সহজলভ্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণ। ফলে হিন্দুস্তান মোটরসের বিক্রি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাছাড়া বিদেশি গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলির প্রবেশও অ্যাম্বাসেডরের পতনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এক নতুন ভোরের প্রতিশ্রুতি
বর্তমান সময়ে যখন বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা এবং চেতনা দিনদিন বাড়ছে, তখন একসময়ের এই রাজকীয় বাহনের ইলেকট্রিক সংস্করণে ফিরে আসা নিঃসন্দেহে নস্টালজিয়া ও ভবিষ্যতের প্রযুক্তির এক অনবদ্য মেলবন্ধন। ভারতীয় বাজারে এই নতুন অ্যাম্বাসেডর ঠিক কতটা জনপ্রিয়তা পায়, তা সময়ই বলবে। তবে ইতিমধ্যেই গাড়িপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে।