প্রযুক্তির দৌলতে আজকের দিনে অজানা ঠিকানায় পৌঁছনো আগের মতো কঠিন নয়। গুগল ম্যাপের মতো ডিজিটাল ন্যাভিগেশন সিস্টেমের সাহায্যে কয়েক ক্লিকেই জানা যায় কোন পথে চললে গন্তব্যে পৌঁছনো যাবে সহজে। কিন্তু প্রযুক্তি যে সর্বদা নির্ভরযোগ্য নয়, তা ফের একবার প্রমাণিত হল আগ্রার একটি ঘটনায়।
সম্প্রতি তাজমহল দেখতে গিয়েছিলেন নয়ডার দুই বোন নিকিতা সিং ও তনিশ্কা ভাটি এবং তাঁদের এক সঙ্গী শিবম চৌধুরি, যিনি দিল্লির টুকামিরপুর এলাকার বাসিন্দা। গন্তব্য ছিল প্রেমের স্মারক তাজমহল, কিন্তু গুগল ম্যাপের ভুল নির্দেশনার কারণে তাঁদের যাত্রা শেষ হয় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে।
গুগলের ভুল পথে চালিত গাড়ি, পৌঁছে গেল ‘ইয়েলো জোনে’

তিন পর্যটক গুগল ম্যাপের দেখানো পথ অনুসরণ করে গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে যান ‘অমর বিলাস ব্যারিয়ার’-এর ভিতরে, যা তাজমহলের সংরক্ষিত এলাকা এবং ‘ইয়েলো জোন’ হিসেবে পরিচিত। এই এলাকায় সাধারণ যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র অনুমোদিত গলফ কার্টই সেখানে প্রবেশের অনুমতি পায়। কিন্তু অভিযুক্তরা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এই এলাকা অতিক্রম করেন, যা নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘনের শামিল।
পুলিশি হস্তক্ষেপ ও বাজেয়াপ্ত গাড়ি
ঘটনাস্থলে মোতায়েন থাকা PAC ও পুলিশ দ্রুত তাঁদের ঘিরে ফেলে। অভিযোগ, ওই তিনজন তখন মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তাজ সিকিউরিটির এসিপি সৈয়দ আরিব আহমেদ জানান, তাঁদের আচরণ ছিল সম্পূর্ণভাবে অসংযত এবং আইনবিরোধী।
পরে জানা যায়, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন নিকিতা সিং। তাঁদের দাবি ছিল, “স্যার, আমরা তো শুধু গুগল ম্যাপ ধরে তাজমহল দেখতে যাচ্ছিলাম।” কিন্তু শুধুমাত্র প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে নিরাপত্তা জোনে প্রবেশ করায়, তাঁদের বিরুদ্ধে ‘জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ’-এর অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাঁদের গাড়িটিও।

প্রযুক্তির ব্যবহার, কিন্তু সচেতনতার অভাব
এই ঘটনা ফের একবার স্মরণ করিয়ে দিল যে প্রযুক্তির উপর সম্পূর্ণ ভরসা না করাই ভাল। বিশেষ করে সংরক্ষিত বা নিরাপত্তা-বেষ্টিত এলাকায় প্রবেশের আগে স্থানীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত থাকা অত্যন্ত জরুরি, নাহলে একটি সামান্য বেড়ানোর পরিকল্পনাও রূপ নিতে পারে আইনি বিপর্যয়ে।
তাজমহল দেখতে এসে থানায় যাওয়া—এই ঘটনা নিঃসন্দেহে এক চরম শিক্ষা, বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের জন্য, যারা প্রযুক্তির উপর অন্ধ বিশ্বাস রাখে। গুগল ম্যাপ সাহায্য করতে পারে ঠিকই, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সচেতনতা ও স্থানিক জ্ঞান প্রয়োগ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।