এক অদ্ভুত ও বিরল অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকলেন স্পেনের ভিলানোভা শহরের মানুষ। ভোরবেলা, যখন শহর ধীরে ধীরে জেগে উঠছে, তখন আচমকাই আকাশে দেখা যায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী। ধীরে ধীরে সেই ধোঁয়া ঘন হতে থাকে, পাক খেয়ে উঠতে থাকে উপরের দিকে, ঠিক যেন এক নতুন ধরনের মেঘ! কিন্তু এই ‘মেঘ’ যেন শীতল, নীরব এক আতঙ্ক বয়ে আনে।
এই ঘটনার পর মুহূর্তের মধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে শহর জুড়ে। প্রশাসনের তরফে জারি হয় জরুরি নির্দেশ—যে যেখানে রয়েছেন, সেখানেই যেন থাকেন। কেউ যেন বাড়ি বা অফিস ছেড়ে বাইরে না বের হন। জানানো হয়, আকাশে যে ধোঁয়ার স্তর তৈরি হয়েছে, তা চরম মাত্রায় বিষাক্ত।
স্থানীয় প্রশাসন সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, এই গ্যাস নাকে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে—শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বালা, মাথা ঘোরা, এমনকি গুরুতর অসুস্থতাও। এই সতর্কতায় রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শহরের বাসিন্দারা।
কীভাবে ঘটল এই ঘটনা?
ঘটনাটি ঘটে ভিলানোভা শহরের একটি রাসায়নিক কারখানায়, যেখানে সুইমিং পুল পরিষ্কারের জন্য ব্যবহৃত ক্লোরিন মজুত করা ছিল বিপুল পরিমাণে। সাধারণভাবে ক্লোরিন অগ্নিসংযোগে সক্ষম নয়, কিন্তু কোনোভাবে সেখানে আগুন লেগে যায়। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ক্লোরিন থেকে উৎপন্ন হতে থাকে বিষাক্ত ধোঁয়া।
এই ধোঁয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। বাতাসে মিশে গেলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে বলেও সতর্ক করে বিশেষজ্ঞরা। আগুন লাগার পর দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল বিভাগ ও জরুরি পরিষেবা দল পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। তবে ততক্ষণে ধোঁয়ার বিস্তার অনেকটা হয়ে গিয়েছে।

গৃহবন্দি দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষ
ঘটনার পরপরই বার্সেলোনার উপকণ্ঠে অবস্থিত ভিলানোভা শহরের বাসিন্দারা বাধ্য হন ঘরের মধ্যে আশ্রয় নিতে। প্রশাসনের নির্দেশ মেনে সকলেই দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। শহরের রাস্তা কার্যত ফাঁকা হয়ে যায়। স্কুল, অফিস, দোকান—সব কিছু বন্ধ।
জরুরি পরিস্থিতি চলাকালীন সময়টা আতঙ্কের মধ্যেই কাটে দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষের। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নাগরিকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসা পর্যন্ত ঘরে থাকার নির্দেশ বজায় থাকে।
পরিস্থিতি এখন কেমন?
দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তৎপরতায় আগুন শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসে। গ্যাসের স্তরও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা। এরপর ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া শুরু হয় এবং মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
ঘটনা যতই স্পেনের এক শহরে ঘটুক না কেন, এটি গোটা বিশ্বের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, রাসায়নিক সংরক্ষণের বিধি এবং জরুরি পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক প্রস্তুতির গুরুত্ব আবারও স্পষ্ট হয়ে গেল এই ঘটনার মাধ্যমে।
দেড় লক্ষ মানুষকে গৃহবন্দি করে দেওয়া এই “ধোঁয়ার মেঘ” আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আকাশের মেঘ সব সময় জল বয়ে আনে না, কখনও কখনও বয়ে আনে নিঃশব্দে ছড়ানো বিষ।