আমরা প্রায়ই শুনেছি যে গাছের প্রাণ রয়েছে ও রাতেরবেলায় গাছের পাতা ছিঁড়তে নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের অনেকের বাড়িতেই বাগান রয়েছে যেখানে অনেক ধরণের গাছ আছে যেগুলোর যত্ন আমরা নিই। কিন্তু আমাদের চারপাশে অনেক গাছ রয়েছে যত্ন পায়না ও আমরা প্রায়ই সেই গাছগুলোর পাতা, ফুল বা ফল ছিঁড়ে নিই। গাছ যত্ন না পেয়েও আমাদের ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। আমরা কখনোই গাছ কাটা , পাতা ছিঁড়ে নেওয়ার আগে একবারও ভেবে দেখিনা যে গাছেরও প্রাণ আছে।
এখন অনেকেই ভাবেন যে গাছের যদি প্রাণ থাকে তাহলে আঘাত পেলে কেন গাছ আওয়াজ করেনা? সেই প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা গাছের প্রাণ নিয়ে গবেষণা করেছেন ও গবেষণা করে যেটি জানতে পেরেছেন সেটি জানলে আপনি আর গাছের পাতা ছিঁড়তে চাইবেন না। কিছুদিন আগে বিজ্ঞান জার্নাল ‘Cell’-এ একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে গাছেরা অযত্ন পেলে বা আঘাত পেলে চিৎকার করে।
তাহলে কি গাছ কথা বলতে পারে?
আমরা অনেকদিন ধরেই জানতাম যে গাছ একটি নীরব প্রাণ। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন গাছপালা নীরব নয়। ‘Sound emitted by plants under stress’ শীর্ষক গবেষণাটি দাবি করছে সমস্ত গাছপালা বিভিন্ন ধরনের শব্দ বের করে আর সেই শব্দগুলো দিয়ে তারা বুঝিয়ে দেয় যে তারা কেমন অবস্থায় আছে।
এই গবেষণাটি করার জন্য বিজ্ঞানীরা গ্রিনহাউসে অনেকগুলো টমেটো ও তামাক গাছ লাগিয়েছিলেন। যেখানে তারা কিছু গাছের খুব যত্ন নিয়েছিল ও কিছু গাছের কম। শুধু তাই নয় কিছু কিছু গাছের পাতা ছেঁড়া হয়েছিল ও এমনকি জলও দেওয়া হয়নি। এরপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence এর সাহায্যে তারা গাছেদের শব্দ শোনার চেষ্টা করেছিলেন। সেই শব্দ শুনে তারা খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এছাড়া তারা সেইসব গাছগুলোর মাটিরও পরীক্ষা করেছিলেন এটা নিশ্চিত করা জন্য যে সেখানে কোনো পোকা শব্দ করছে কিনা। কিন্তু তারা সেখানে কিছুই খুঁজে পায়নি। তাই এটি প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে সেই শব্দ গাছেরাই উৎপন্ন করেছে।

তারা জানতে পেরেছেন যে গাছ কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শব্দ করে। গাছ যত্ন পেলে একধরনের ও আঘাত বা অযত্ন পেলে আরেকধরণের আওয়াজ করে। প্রতিটি সাধারণ গাছ ঘণ্টায় ঘণ্টায় একবার একবার করে শব্দ করে। গাছ যখন আঘাত পায় তখন সে ১৩ থেকে ৪০ বার চিৎকার করে। অযত্ন পেলে গাছ দুদিনের মধ্যে সাহায্যের জন্য ডাকতে থাকে।
জানেন কী এই শব্দ কারা কারা শুনতে পারে ?
এই গবেষণা করা প্রধান লেখক লিলাচ হাদানি জানিয়েছেন আপনি যদি কোনো শান্ত ফসলের মাঠে যান তাহলে আপনি এই শব্দ শুনতে পারবেন। তবে সেই শব্দেও রয়েছে অনেক তথ্য। সেই উচ্চ কম্পন যুক্ত শব্দ মানুষ শুনতে না পারলেও অনেক কীটপতঙ্গ ও প্রাণী এই ধরনের শব্দ শুনতে পারে যেমন কাঠবিড়ালি, বাদুড় বা ইঁদুর। শুধু তাই নয় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন উদ্ভিদ যখন বেড়ে ওঠে তখন অনেক প্রজাতিই তাদের সাহায্য করে। তবে সেটি এখনও স্পষ্ট হয়নি বিজ্ঞানীদের কাছে।
আমরা কেন এই শব্দ শুনতে পাই না?
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মানুষ সর্বোচ্চ 20 KHz শব্দ শুনতে পায় যেই ফ্রিকোয়েন্সি শৈশবকালে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি কমে যায়। অন্যদিকে গাছ ৪০ থেকে ৮০ KHz শব্দ নির্গমন করে যেটি আমাদের কাছে খুবই উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিসম্পন্ন শব্দ। তাই আমরা সেই চিৎকার শুনতে পাই না। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু অনেকদিন আগেই প্রমাণ করেছেন গাছেরও প্রাণ আছে। গাছেরও আমাদের মত অনুভূতি আছে। তাই মানুষ ও গাছ দুজনেই ব্যথা পেলে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে। সেই ব্যথার কথা আমাদের কাছে অজানা ছিল কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছে।