১৮ বছরের প্রতীক্ষার পর ট্রফি!বিরাট কাঁদলেন, অনুষ্কা অবাক—ইতিহাস গড়ল আরসিবি

ইতিহাস গড়ল আরসিবি

অবশেষে ১৮ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান! রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) জিতল তাদের প্রথম আইপিএল (IPL) ট্রফি। বিরাট কোহলির জীবনে পূর্ণতা আনলো এই বহু প্রতীক্ষিত শিরোপা। ট্রফি নিশ্চিত হতেই ডাগআউটে শিশুসুলভ কান্নায় ভেঙে পড়েন কোহলি, যা কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই ঐতিহাসিক জয় তিনি উৎসর্গ করেছেন দলের অকৃত্রিম সমর্থকদের, যারা দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে অবিচলভাবে আরসিবি-কে সমর্থন জুগিয়েছেন।

আবেগের বাঁধ ভাঙা মুহূর্ত

ট্রফি জয়ের পর এক আবেগঘন মুহূর্তে বিরাট কোহলি বলেন, “এই ম্যাচটা যতটা না দলের, তার থেকেও বেশি সমর্থকদের।” সমর্থকদের এই অবিচল সমর্থন তাকে এতটাই মুগ্ধ করেছে যে তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। কোহলি বলেন, “আমার কাছে যা ছিল, সব দিয়েছি। আমি কোনোদিন ভাবিনি এই দিনটা আসবে। শেষ বলটা হওয়ার পর আমি আবেগ সামলাতে পারিনি।”

ম্যাচ শেষে বিরাটের এই কান্না এবং পরবর্তীতে স্ত্রী অনুষ্কা শর্মাকে জড়িয়ে ধরে তার অনুভূতি প্রকাশ গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। বিরাট অনুষ্কাকে তার সবচেয়ে বড় সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আজ আমি এক শিশুর মতো ঘুমাবো। আমি সুযোগ পেয়েছি এই খেলাটা খেলার। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ আমাকে ট্রফি দেওয়ার জন্য।”

ম্যাচ শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট পরেও যখন ধারাভাষ্যকার ম্যাথু হেডেন তার সঙ্গে কথা বলতে যান, তখনও বিরাটের চোখ ছলছল করছিল। তিনি জানান, এক সময় মনে হয়েছিল আইপিএল হয়তো আর জিততেই পারবেন না। এই জয় তার দীর্ঘ পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের ফসল।

পূর্ণ হলো কোহলির ক্রিকেট জীবনের বৃত্ত

এক দিনের বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি – দেশের হয়ে সবকিছুই জিতেছিলেন বিরাট। এবার আইপিএল ট্রফি হাতে ওঠাতেই তার ক্রিকেট জীবনের বৃত্ত সম্পূর্ণ হলো।

কোহলি বলেন, “গত ১৮ বছর ধরে নিজের সবটা এই দলকে দিয়েছি। এই দলের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা ছিল। কখনও কখনও মনের মধ্যে বিভিন্ন ভাবনাচিন্তা এলেও এই দলের সঙ্গেই থেকে গিয়েছি। সমর্থকদের সঙ্গে নিয়েই জয়ের স্বপ্ন দেখেছি। এই জয় আরও ভালো লাগছে কারণ আমার হৃদয় এবং আত্মা বেঙ্গালুরুর সঙ্গেই রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আইপিএলের শেষ দিন পর্যন্ত এই দলের সঙ্গেই থাকব।”

প্রাক্তন সতীর্থদের অবদান স্মরণ

এই জয়ের কৃতিত্ব একা নিতে রাজি নন কোহলি। তিনি বারবার তার দুই প্রাক্তন সতীর্থ এবি ডিভিলিয়ার্স (AB de Villiers) এবং ক্রিস গেইলের (Chris Gayle) অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ম্যাচ শেষের পর ত্রিমূর্তিকে এক ফ্রেমে খুনসুটি করতেও দেখা যায়।

কোহলি বলেন, “এবিডি এই দলের জন্য যা করেছে তা কোনো মতেই অস্বীকার করা যাবে না। ম্যাচের পর ওকে বলেছিলাম, ‘এই জয় যতটা আমাদের, ততটাই তোমার। আমি চাই তুমিও আমাদের সঙ্গে উৎসব করো’।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা তিনজন একসঙ্গে কত বছর এই দলটার সঙ্গে কাটিয়েছি। আমরা তিনজনই নিজেদের সেরা সময়টা বেঙ্গালুরুকে দিয়েছি। সেই স্মৃতি কখনও ভোলা যাবে না।”

অনুষ্কার অবিচ্ছেদ্য সমর্থন

বিরাট কাঁদলেন, অনুষ্কা অবাক

ম্যাচ শেষে অনুষ্কার বাহুডোরে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছিল বিরাটকে। পরবর্তীতে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে তিনি অনুষ্কার অবদানের কথা বলেন, “২০১৪ সাল থেকে অনুষ্কা বেঙ্গালুরুকে সমর্থন করছে। ও নিজেও বেঙ্গালুরুর মেয়ে। আমাকে সবচেয়ে বেশি কাছ থেকে দেখেছে ও। কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যখন গিয়েছি, যখন ভেঙে পড়েছি, তখন অনুষ্কাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাকে ভরসা দিয়েছে। নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে। সহধর্মিণী পাশে না থাকলে এসব কিছুই সম্ভব হতো না।”

টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালোবাসা

বিরাট কোহলি তার ক্যারিয়ারে টেস্ট ক্রিকেটকে সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “আমাকে যদি বাছতে হয়, তাহলে আমি টেস্ট ক্রিকেটকে বাছব।” তরুণ প্লেয়ারদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “যদি তোমাদের সম্মান আদায় করতে হয়, তাহলে টেস্ট ক্রিকেট বেছে নাও।”

ঐতিহাসিক এই জয়ের পর আইপিএল ট্রফি হাতে প্রথম পোস্টটি করেন বিরাট কোহলি। ইনস্টাগ্রামে উচ্ছ্বাস এবং সেলিব্রেশনের ছবি শেয়ার করে তিনি সমর্থকদের জন্য একটি বিশেষ বার্তা দেন এবং জানান, এই জয় কাদের উৎসর্গ করেছেন।

ইনস্টা পোস্টে বিরাট লেখেন, “এই দল স্বপ্নপূরণ সম্ভব করেছে। এই সিজন আমি কখনও ভুলব না। আড়াই মাসের এই জার্নি খুব উপভোগ করেছি। যে সমস্ত ফ্যানেরা কখনও আরসিবি-র পাশ থেকে সরেননি তাঁদের জন্যই এই জয়। এতগুলো বছরের হার্টব্রেক, হতাশার পর এই জয়। প্রত্যেক ইঞ্চিতে আমাদের পরিশ্রমের ফসল। আর আইপিএল আমায় ১৮ বছর অপেক্ষা করিয়েছ বন্ধু ট্রফি তোলার জন্য। তবে এই অপেক্ষা যথার্থ।”

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts