মাছ ধরতে ৬১ বছরের বৃদ্ধ একটি ছোট নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন সমুদ্রের বুকে। উদ্দেশ্য ছিল মাত্র দুই সপ্তাহ মাছ ধরা। তবে সেই দুই সপ্তাহের পরিণতি হতে পারে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য। বিশেষ কারণে হারিয়ে যান সমুদ্রে, এবং তার পরিণতিতে তিনি তিন মাস ধরে আটকে ছিলেন প্রশান্ত মহাসাগরের বিশাল জলরাশির মাঝে।
প্রথমে, যখন তিনি সমুদ্রে বেরিয়েছিলেন, তার সঙ্গে ছিল যথেষ্ট খাবার এবং পানীয় জল। মাছ ধরার জন্য তার ছোট নৌকাটিতে ছিল কিছু খাবার যা দুই সপ্তাহের জন্য তার প্রয়োজন ছিল।

তবে, যেহেতু তার নৌকায় কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না, তাই সমুদ্রের গভীরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। তীরের কাছেই থাকার কথা ছিল তার। কিন্তু একদিন হঠাৎই আবহাওয়া বদলে যায়। ঝড় ওঠে, এবং সেই ঝড়ে তার নৌকার নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। ঝড় থামলেও সমুদ্র আবার শান্ত হলে তিনি বুঝতে পারেন, তিনি কোথাও হারিয়ে গেছেন।
তিনি তখন গভীর সমুদ্রে চলে গেছেন, যেখানে কিছুই চিনতে পারছিলেন না। নৌকায় কোনোরকম যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায়, তিনি কোন দিক দিয়ে স্থলভাগে ফিরবেন, সে সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও তিনি বুঝতে পারেননি কোন দিকে যেতে হবে। দিনের পর দিন এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে খাবারের প্রায় সংকট দেখা দেয়।
যখন বৃষ্টি হচ্ছিল, তখন তিনি পানি সংগ্রহ করে পানীয় জল নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু খাবারের সংকটের সমাধান কী হবে? সঙ্গের খাবার শেষ হওয়ার পর, তিনি অতি অস্বাভাবিক এক উপায় অবলম্বন করেন। নৌকায় থাকা কয়েকটি আরশোলা খেয়ে তিনি কিছুটা বেঁচে থাকার শক্তি পান।
আরশোলা শেষ হওয়ার পর, তিনি সমুদ্রে পাখি ধরেন এবং সেগুলি খেয়ে তার ক্ষুধা নিবারণ করেন। কিন্তু দিন চলে যেতে থাকে, আর খাবারের সংকট আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এক সময়, তিনি একটি কচ্ছপ ধরে তা খেয়ে নেন। এরপর আর কিছু খাওয়ার উপায় ছিল না।

কিন্তু, তার মনে একটিই আশা ছিল, ছোট্ট নাতনিকে দেখার। তার পরিবার, তার প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আশা তাকে বাঁচিয়ে রাখে। অবশেষে, ৯৫ দিন পর, পেরুর বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের নৌকা ইকুয়েডরের একটি জাহাজের চোখে পড়ে।
জাহাজটি নৌকায় পৌঁছালে দেখা যায়, বৃদ্ধ প্রায় অচেতন অবস্থায় সেখানে পড়ে আছেন। তাকে উদ্ধার করে পরে পেরুর উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
যে অদম্য মনোবল এবং আশ্চর্য শক্তি নিয়ে ওই বৃদ্ধ প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ৯৫ দিন একা বেঁচে থাকতে পেরেছিলেন, তা আজও তার কাছে বিশ্বাস করা কঠিন। তবে তার জীবনের এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, মানুষের চেতনা এবং ইচ্ছাশক্তি কতটুকু শক্তিশালী হতে পারে।