গালে চওড়া হাসি, কপালে লাল বড় টিপ, যার সারেঙ্গি ক্রমশ বেজে চলেছে অবিরাম। ১৯৭২ সালে শুরু করেছিলেন কেরিয়ার দীর্ঘ বছর পার হলেও আজও তিনি থেমে নেই। তিনি আর কেউ নন, হৈমন্তী শুক্লা, যে গায়িকার গান, সুর এবং রেকর্ডসমূহ এখনও মুগ্ধ করে লাখো মানুষের হৃদয়। তাঁর সঙ্গীতের জাদু এখনও অটুট, আর সেই জাদুর সঙ্গে নিজের জীবনের গল্পও এক অনন্য ও বিশেষ।

অবিবাহিত হয়েও সঙ্গীতের প্রতি তাঁর অগাধ প্রেমই তাকে অন্য সবকিছুর উপরে রেখেছে। তিনি যখন রিয়ালিটি শো’র মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, তখন এক দর্শক প্রশ্ন করেছিলেন, “আপনি কি কখনো সংসারী হওয়ার কথা ভেবেছেন?” সেদিনই গায়িকার উত্তর ছিল স্পষ্ট, “না, কখনও না। গান ছাড়া আমার কিছুই ভাল লাগে না। গান আমার জীবনের প্রেম, সেটা ছেড়ে অন্য কিছু ভাবা সম্ভব হয়নি।”
তবে, তার জীবনে কোনো প্রেম আসেনি, এমনটা নয়। সুরের প্রতি তার ভালবাসার মধ্যে এক ধরনের গভীরতা ছিল, যা মাঝে মাঝে তাকে জীবনের অন্য এক বাস্তবতার দিকে নিয়ে যেত। গায়িকার কথায়, “কেউ হয়তো আমাকে ভালবেসেছে, কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি। অনেকেই আমায় জিজ্ঞাসা করেন, তুমি এত ভালবাসার গানগুলো কাকে ভেবে গাও? আমি তখন বলি, ওই মাইক্রোফোনটাই আমার প্রেমিক হয়ে যায়।”
তবে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে, “জন্ম দিলেন কি শুধুই মা হওয়া যায়?” প্রতিটি গান, প্রতিটি সুর, প্রতিটি মঞ্চে উপস্থিত হয়ে তিনি তার অন্তরের মাতৃত্ববোধের পরিচয় দেন। শিষ্যরা তাঁকে মা বলে ডাকে, এবং তাঁর সঙ্গীতের মাঝে সেই মাতৃত্বের প্রেম স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

হৈমন্তী শুক্লার জীবনে গানই ছিল তাঁর পৃথিবী, এবং সেই গান ছিল তার জীবনের একমাত্র প্রেম। গায়িকার ভক্তরা এখনও তাঁর সুরে মোহিত, সেই সুরের সঙ্গে আজও কাটছে প্রতিটি দিন। ১৯৭২ সালে শুরু হওয়া তাঁর যাত্রা, আজও শোনা যাচ্ছে। তাঁর আত্মজীবনী ‘এখনও সারেঙ্গিটা বাজছে’ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তিনি নিজের সঙ্গীতজীবনের নানা অজানা দিক তুলে ধরেছেন।
আজও যখন তিনি গাইছেন, তখন সেই সারেঙ্গির সুর যেন আরও একবার আমাদের হৃদয়ে বাজে। শিল্পী হিসেবে এক অমর ধারা তৈরি করেছেন তিনি, যা অমলিন এবং অবিচলিত। তাঁর জীবন, তাঁর সঙ্গীত, তাঁর পথচলা—সবই এক অবিরাম সুরের মতো, যা কখনও থামবে না।