প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় মাতৃ দিবস। কিন্তু কেন এই দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে? কী এমন তাৎপর্য রয়েছে এই নির্দিষ্ট দিনের ? অনেকেই জানেন না, এর পেছনে রয়েছে এক আবেগঘন ইতিহাস এবং একজন কন্যার মায়ের প্রতি নিখাদ ভালোবাসার গল্প।
মাতৃ দিবস উদযাপনের আধুনিক রূপের সূচনা হয় ১৯০০ সালের শুরুর দিকে। আনা জার্ভিস (Anna Jarvis) নামে এক আমেরিকান মহিলা তাঁর প্রয়াত মাকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে গির্জার সামনে এক প্রার্থনা সভার আয়োজন করেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে এই দিনটি ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকা জুড়ে। পরবর্তীকালে ১৯২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন (Woodrow Wilson) এই দিনটিকে জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেন।

তারপর থেকেই প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আমেরিকায় মাদার’স ডে হিসেবে পালিত হতে থাকে, আর ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সেই রীতিকে অনুসরণ করে। ভারতেও এই প্রথা গৃহীত হয়েছে। ২০২৫ সালে এই দিনটি পড়েছে ১১ মে রবিবার।
তবে মাতৃ দিবসের মূল ধারণা কিন্তু নতুন কিছু নয়। বহু প্রাচীন সভ্যতা ও ধর্মগ্রন্থে মাতৃবন্দনার উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিস ও রোমে ‘মাতৃ দেবী’র পূজা করা হতো। ভারতে মা দুর্গা, মা লক্ষ্মী, মা অন্নপূর্ণা—এঁদের পূজার মাধ্যমে মায়ের শক্তিকে চিরকালই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
একজন মায়ের অবদান যে কতখানি, তা ভাষায় ব্যাখ্যা করা প্রায় অসম্ভব। সন্তানকে গর্ভে ধারণ করা, জন্ম দেওয়া, লালন-পালন করে গড়ে তোলা, জীবনের প্রতিটি ধাপে সঠিক দিশা দেখানো—মায়ের ভূমিকা ছাড়া একজন মানুষের বেড়ে ওঠা কল্পনাই করা যায় না।
এই বিশেষ দিনে সন্তানরা তাদের মায়েদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর চেষ্টা করেন। কেউ উপহার দেন শাড়ি, জুয়েলারি বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী, কেউ বা হাতে বানানো কিছু উপহার দিয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটান। স্কুল, কলেজ, বিভিন্ন সংস্থা ও ক্লাবেও এই দিনটি নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে পালন করা হয়।

তবে সব উপহারের ঊর্ধ্বে থাকে সন্তানদের আন্তরিক ভালোবাসা ও সময়। কারণ একজন মায়ের কাছে তার সন্তানের একটু যত্ন ও সম্মানই সবচেয়ে বড় উপহার।
মাতৃ দিবস কেবল এক দিনের অনুষ্ঠান নয়—এটি মায়েদের প্রতি আমাদের প্রতিদিনের দায়িত্ব ও ভালোবাসার প্রতীক। সেই নারী, যাঁর ত্যাগে গড়ে ওঠে সন্তানের ভবিষ্যৎ, তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর দিন আজ। তাই এই দিনটি কাটুক মায়ের পাশে, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতায় ভরপুর হয়ে।