দিঘা কিংবা পুরী—বাঙালির কাছে সমুদ্র মানেই এই দুটো নাম। সপ্তাহান্তের ছুটি হোক বা লম্বা অবকাশ, সমুদ্রের টানে এই জায়গাগুলোয় ছুটে যান না, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু এবার দিঘা ও পুরীর সমুদ্রজলে ঘটছে এক রহস্যময় রঙ পরিবর্তনের ঘটনা!
পরিবেশবিদরা চরম উদ্বেগে – কেন হঠাৎ নীল জল রূপ নিচ্ছে ধূসর বা কালোতে? স্থানীয়রা বিস্মিত, বিজ্ঞানীরা সতর্ক, কারণ এমন ভীতিকর দৃশ্য আগে কখনও দেখা যায়নি। শুনে চমকে গেলেন তো? কিন্তু এটাই এখন চরম বাস্তবতা! কেন এমন হচ্ছে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা যা বলছেন, তা আপনার চোখ কপালে তুলে দিতে পারে।
কালো হয়ে যাচ্ছে দিঘা-পুরীর সমুদ্রের জল!
যত দিন যাচ্ছে, দিঘা ও পুরীর মতো সমুদ্র উপকূলবর্তী জায়গাগুলোতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে দিঘায় পুরীর আদলে তৈরি হওয়া নতুন জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পর পর্যটকদের ঢল নেমেছে। তবে এখন পর্যটকদের মধ্যে একটা বড় আক্ষেপ দেখা যাচ্ছে—দিঘা কিংবা পুরীর সমুদ্রের জল আর আগের মতো নীল নেই, বরং তার থেকে অনেকটাই ধূসর বা কালো হয়ে গেছে!
এই ঘটনা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি এটা কোনো বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে?

পুরীর সমুদ্র মানেই বঙ্গোপসাগর, যা মিশেছে ভারত মহাসাগরে, আর এই সমুদ্র মানেই তো নীল! কিন্তু এখন সেই নীল জলের এক বিন্দুও নাকি দেখা যাচ্ছে না, ফলে সমুদ্রপ্রেমীদের মন বেজায় খারাপ। এই অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণ কী, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ করেছেন।
কী বলছেন বিজ্ঞানীরা? ভয়ংকর তথ্য সামনে এল!
সমুদ্রের জল ধূসর বা কালো হয়ে যাওয়ার পেছনে বিজ্ঞানীরা যে কারণ ব্যাখ্যা করেছেন, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। একদল বিজ্ঞানীর গবেষণা বলছে, ক্রমাগত ঘোলাটে, কালো হচ্ছে সমুদ্রের জল! গবেষণার ফল অনুযায়ী, গত দু’দশকে বিশ্বের ২১ শতাংশেরও বেশি সমুদ্রের জল উল্লেখযোগ্যভাবে ঘোলা হয়ে গিয়েছে।
প্রায় ৭৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা এই পরিবর্তনের শিকার হয়েছে, ফলে সমুদ্রের সেই মনকাড়া নীল জল অনেক জায়গাতেই আর দেখা যাচ্ছে না।
প্লাইমাউথ ইউনিভার্সিটি এবং প্লাইমাউথ মেরিন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীদের এই চাঞ্চল্যকর গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে গ্লোবাল চেঞ্জ বায়োলজি জার্নালে। বিজ্ঞানীরা আরও দাবি করেছেন, সমুদ্রের আলোর বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হচ্ছে। এর ফলে ফোটিক জোনের গভীরতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

সহজ ভাষায় বললে, সমুদ্রের যে স্তরে সূর্যের আলো পৌঁছায়, সেই স্তর ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসছে। আর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে ৯০ শতাংশ সামুদ্রিক প্রাণীর জীবনে!
এই পরিবর্তন কি শুধুমাত্র দিঘা-পুরীর সমুদ্রেই সীমাবদ্ধ, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো কারণ আছে? বিজ্ঞানীরা যে তথ্য দিচ্ছেন, তা কিন্তু বিশ্বজুড়েই সমুদ্রের পরিবেশের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে। এই পরিস্থিতি কি মানবসৃষ্ট দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফল? সময় এসেছে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার এবং সচেতন হওয়ার। আপনার কী মনে হয়?