ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়নের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের চেনাব নদীর উপর নির্মিত বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতুর শুভ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত শুধু ভারতের প্রকৌশল দক্ষতারই প্রমাণ নয়, এটি জম্মু-কাশ্মীরের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনেও এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
উধমপুরের এয়ারফোর্স স্টেশনে নেমে বিশেষ হেলিকপ্টারে চেনাব সেতু এলাকায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, এপ্রিল মাসের পহেলগাম জঙ্গি হামলার পর প্রতিশোধমূলক ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর এটি ছিল তাঁর প্রথম জম্মু-কাশ্মীর সফর।
এক অভূতপূর্ব প্রকৌশল নিদর্শন:
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চেনাব সেতুটি প্রায় ৩৫৯ মিটার উঁচুতে অবস্থিত, যা বিশ্ববিখ্যাত আইফেল টাওয়ারের উচ্চতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ১৩১৫ মিটার দীর্ঘ এই বিশাল স্টিল আর্চ সেতুটি ভূমিকম্প এবং তীব্র বাতাস প্রতিরোধে সক্ষম। এর নির্মাণশৈলী ভারতের প্রকৌশলগত সক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর মতে, এই সেতু কেবল একটি অসাধারণ প্রকৌশল নিদর্শনই নয়, এটি জম্মু ও শ্রীনগরের মধ্যে সংযোগকে আরও দৃঢ় করবে। এই সেতু চালুর ফলে কাটরা থেকে শ্রীনগর পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র ৩ ঘণ্টা, যা পূর্বে ২-৩ ঘণ্টা বেশি লাগত।
উন্নয়নের জোয়ারে জম্মু-কাশ্মীর:
সেতু উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কাটরায় ৪৬,০০০ কোটি টাকার একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে শ্রীমাতা বৈষ্ণো দেবী ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এক্সেলেন্স-এর শিলান্যাস এবং উদমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল লিঙ্ক (USBRL) প্রকল্পের অংশ উদ্বোধন। এই প্রকল্পগুলি জম্মু-কাশ্মীরের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নতুন দুই বন্দে ভারতের সূচনা:
এই ঐতিহাসিক দিনে প্রধানমন্ত্রী কাটরা ও শ্রীনগর থেকে দুটি নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনেরও সূচনা করেন। এই দুটি ট্রেন দিনে দুইবার করে চলবে, যা এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা:

প্রধানমন্ত্রীর এই ঐতিহাসিক সফরে উপস্থিত ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী USBRL প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিক এবং আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলে তাঁদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
চেনাব সেতু প্রকল্পের তাৎপর্য:
এই সেতু এবং রেল প্রকল্প জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে রেলপথে সংযুক্ত করবে। কৌশলগত, অর্থনৈতিক এবং পর্যটনের দিক থেকেও এর তাৎপর্য অপরিসীম। এই সেতু কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই উন্নত করবে না, এটি অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও নতুন গতি আনবে এবং পর্যটকদের জন্য এক নতুন আকর্ষণ হিসেবেও বিবেচিত হবে। চেনাব সেতু ভারতের এক নতুন গৌরবগাঁথা হয়ে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।