সম্প্রতি ভারতে একের পর এক ব্যক্তি পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ পুলিশ বিভিন্ন অভিযানে এক ইউটিউবার ও স্থানীয় এক কোয়াক ডাক্তারসহ অন্তত ১২ জনকে পাক-যোগ থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের তালিকায় কারখানার শ্রমিক ও স্নাতকোত্তর পড়ুয়াও আছেন। এই ঘটনা ভারতে গুপ্তচরবৃত্তির নেটওয়ার্ক নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
মূল ধৃতরা এবং তাদের ভূমিকা :

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুজন মহিলা ‘গুপ্তচর’ এবং একজন পাকিস্তানি আধিকারিকের নাম উঠে এসেছে, যা ঘটনাটিকে আরও চাঞ্চল্যকর করে তুলেছে।
- জ্যোতি মালহোত্রা (ইউটিউবার, হরিয়ানা): হরিয়ানার এই ইউটিউবার পাকিস্তান হাই কমিশনে ভিসার জন্য গিয়েছিলেন, সেখানেই তিনি দানিশ নামে এক পাকিস্তানি কর্মকর্তার সংস্পর্শে আসেন। দানিশ সেই একই কর্মকর্তা যাকে ভারত ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ (Persona non grata) ঘোষণা করেছিল। অভিযোগ, জ্যোতি একাধিকবার পাকিস্তান এবং একবার চিন সফর করেছেন। সাম্প্রতিক সামরিক সংঘর্ষের সময়ও তিনি পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন বলে জানা গেছে। পুলিশ বর্তমানে জ্যোতি মালহোত্রার আর্থিক লেনদেন এবং ভ্রমণের বিশদ খতিয়ে দেখছে। কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন যে, পাকিস্তানকে ভবিষ্যতে গুপ্তচর অভিযানের জন্য ‘অ্যাসেট’ হিসাবে জ্যোতিকে তৈরি করছিল।
- গুজালা (৩১ বছর বয়সী): গুজালা নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনে নিযুক্ত পাকিস্তানি অফিসার এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল বলে অভিযোগ। সে টাকার বিনিময়ে পাকিস্তানি আধিকারিকদের ভারতীয় সেনার কার্যকলাপের বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ইউপিআইয়ের মাধ্যমে দানিশের থেকে সে টাকা পেয়েছিল।
অন্যান্য ধৃতরা এবং তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ

পাকিস্তানি আইএসআই (ISI)-এর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আরও যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের পরিচয় ও জড়িত থাকার বিস্তারিত তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
- শাহজাদ (উত্তরপ্রদেশের রামপুর): রামপুর থেকে রবিবার মোরাদাবাদ স্পেশাল টাস্ক ফোর্স তাকে সীমান্ত চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। এই ব্যক্তি বেশ কয়েকবার প্রতিবেশী দেশে গিয়ে তার পাকিস্তানি হ্যান্ডলারদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন এবং জাতীয় সুরক্ষা সম্পর্কিত সংবেদনশীল তথ্যও পাচার করেছেন।
- ফালাক্ষের মাসিহ এবং সুরজ মাসিহ (পাঞ্জাবের অমৃতসর): দুজনেই অমৃতসরের আজনালার বাসিন্দা। অভিযোগ, তারা সীমান্তবর্তী জেলার সেনা ছাউনি এলাকা ও বিমানঘাঁটির স্পর্শকাতর তথ্য ও ছবি পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইকে পাচার করত। তারা তাদের হ্যান্ডলারদের সেনাবাহিনীর গতিবিধি, বিএসএফ ক্যাম্প, বিমানবন্দরের অবস্থান এবং তাদের ছবিসহ অন্যান্য স্পর্শকাতর তথ্য সম্পর্কে অবহিত করত।
- ইয়ামিন মহম্মদ (পাঞ্জাব): অভিযোগ, সংবেদনশীল তথ্য ভাগ করে নেওয়ার জন্য সে পাকিস্তান থেকে অনলাইন পেমেন্ট নিয়েছিল।
- সুখপ্রীত সিং ও করণবীর সিং (পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর): এদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন ও ০.৩০ বোরের আটটি তাজা কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন তারা দুজনে সেনার গতিবিধি এবং পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থানগুলির বিবরণ সম্পর্কে পাকিস্তানকে জানিয়েছিল। তারা আগেও মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিল।
- নোমান ইলাহি (হরিয়ানার পানিপথ): উত্তরপ্রদেশের কৈরানার বাসিন্দা নোমান ইলাহিকে পাকিস্তানকে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহের অভিযোগে রাজ্য পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সে পানিপথের হালি কলোনিতে বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে থাকত।
- দেবেন্দর সিং (২৫, স্নাতকোত্তর ছাত্র, হরিয়ানার কৈথাল): সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় সেনার অস্ত্র সহ ছবি আপলোড করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সিং গত বছর তীর্থযাত্রার সময় পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছিলেন। সে পাতিয়ালা সেনানিবাসের বাইরে থেকে ছবি তুলে পাকিস্তানে পাঠিয়েছিল।
- আরমান (হরিয়ানার নুহ): দিল্লিতে পাক হাই কমিশনে কর্মরত এক কর্মীর মাধ্যমে সে ভারতীয় সেনা ও অন্যান্য সামরিক কার্যকলাপ সংক্রান্ত তথ্য পাচার করত বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের তথ্য শেয়ার করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
- তারিফ মহম্মদ (হরিয়ানা) : পাকিস্তানে সামরিক কার্যকলাপের গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ রয়েছে তারিফের বিরুদ্ধে। তিনি দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মী আসিফ বালোচ ও জাফরকে সিমকার্ড দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
এই গ্রেপ্তারগুলি ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় সাফল্য এবং এটি সীমান্তে গুপ্তচরবৃত্তির নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তদন্ত চলছে।