গভীর প্রেম নিয়ে কবিতা, Poems about Intense love in Bengali

গভীর প্রেম নিয়ে কবিতা

কবিতা আমাদের অনেকেরই পছন্দের জায়গা। কবিতা লিখতে কিংবা পড়তে আমরা অনেকেই ভালবাসি। তা যদি হয় ভালোবাসার কবিতা তাহলে তো আর কথাই নেই। ভালোবাসা আবেগ-অনুভূতি-মায়া দিয়েই তৈরি হয়। ভালোবাসার কবিতা মানুষের ভালবাসাকে জাগ্রত করে। মনকে ভেতর থেকে আনন্দ এবং খুশি রাখে। আজকের এই প্রতিবেদন গভীর প্রেমের কবিতা নিয়ে।

গভীর প্রেম নিয়ে লেখা কবি নজরুলের কবিতা, Poetry of Kazi Nazrul written about Intense love :

অনেক ছিল বলার
– কাজি নজরুল ইসলাম

অনেক ছিল বলার
- কাজি নজরুল ইসলাম
অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে।
পথ ছিল গো চলার, যদি দু’দিন আগে আসতে।
আজকে মহাসাগর-স্রোতে
চলেছি দূর পারের পথে
ঝরা পাতা হারায় যথা সেই আঁধারে ভাসতে।
গহন রাতি ডাকে আমায় এলে তুমি আজকে।
কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায় বেলার সাঁঝকে।
আসতে যদি হে অতিথি
ছিল যখন শুকা তিথি
ফুটত চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী চাঁদ হাসতে।
 

অভিশাপ
কাজী নজরুল ইসলাম

অভিশাপ
কাজী নজরুল ইসলাম
যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে –
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মরু কানন গিরি,
সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
যেদিন আমায় খুঁজবে –
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোওয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে, –
জাগবে হঠাৎ চমকে!
ভাববে বুঝি আমিই এসে
ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
বেদনাতে চোখ বুজবে –
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না,
ব’লবে সবাই – “সেই যে পথিক, তার শেখানো গান না?”
আসবে ভেঙে কান্না!
প’ড়বে মনে আমার সোহাগ,
কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
অশ্রু-হারা কঠিন আঁখি
ঘন ঘন মুছবে –
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ –
কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!
বুকের মালা ক’রবে জ্বালা
চোখের জলে সেদিন বালা
মুখের হাসি ঘুচবে –
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আশা
– কাজী নজরুল ইসলাম

আশা – কাজী নজরুল ইসলাম
হয়তো তোমার পাবো দেখা-
যেখানে ওই নত আকাশ চুমছে বনের সবুজ রেখা।
ওই সুদুরের গাঁয়ের মাঠে, আলের পথে,
বিজন ঘাটে হয়তো এসে মুচকি হেঁসে ধরবে আমার হাতটি একা।
ওই নীলের ওই গহন পারে,
ঘোমটা হারা তোমার চাওয়া আনলে খবর গোপন দ্যুতি দিকপারের
ওই দখিন হাওয়া বনের ফাঁকে দুষ্টু
তুমি আসতে যাবে নয়ন চুমি সেই
সে কথা লিখছে হোথা দিগন্তের ওই অরুন লেখা।

গভীর প্রেম নিয়ে লেখা কবিগুরুর কিছু কবিতা, Some of Kabiguru’s poems written about Intense love :

ধ্যান
কাব্যগ্রন্থ-মানসী

নিত্য তোমায় চিত্ত ভরিয়া
স্মরণ করি,
বিশ্ববিহীন বিজনে বসিয়া
বরণ করি;
তুমি আছ মোর জীবন মরণ
হরণ করি।
তোমার পাই নে কূল–
আপনা-মাঝারে আপনার প্রেম
তাহারো পাই নে তুল।
উদয়শিখরে সূর্যের মতো
সমস্ত প্রাণ মম
চাহিয়া রয়েছে নিমেষ-নিহত
একটি নয়ন-সম–
অগাধ অপার উদাস দৃষ্টি,
নাহিকো তাহার সীমা।
তুমি যেন ওই আকাশ উদার,
আমি যেন ওই অসীম পাথার,
আকুল করেছে মাঝখানে তার
আনন্দপূর্ণিমা।
তুমি প্রশান্ত চিরনিশিদিন,
আমি অশান্ত বিরামবিহীন
চঞ্চল অনিবার–
যত দূর হেরি দিক্দিগন্তে
তুমি আমি একাকার।

শেষ বসন্ত
কাব্যগ্রন্থ-পুরবী

শেষ বসন্ত
কাব্যগ্রন্থ-পুরবী
আজিকার দিন না ফুরাতে
হবে মোর এ আশা পুরাতে–
শুধু এবারের মতো
বসন্তের ফুল যত
যাব মোরা দুজনে কুড়াতে।
তোমার কাননতলে ফাল্গুন আসিবে বারম্বার,
তাহারি একটি শুধু মাগি আমি দুয়ারে তোমার।
বেলা কবে গিয়াছে বৃথাই
এতকাল ভুলে ছিনু তাই।
হঠাৎ তোমার চোখে
দেখিয়াছি সন্ধ্যালোকে
আমার সময় আর নাই।
তাই আমি একে একে গনিতেছি কৃপণের সম
ব্যাকুল সংকোচভরে বসন্তশেষের দিন মম।
ভয় রাখিয়ো না তুমি মনে!
তোমার বিকচ ফুলবনে
দেরি করিব না মিছে,
ফিরে চাহিব না পিছে
দিনশেষে বিদায়ের ক্ষণে।
চাব না তোমার চোখে আঁখিজল পাব আশা করি
রাখিবারে চিরদিন স্মৃতিরে করুণারসে ভরি।
ফিরিয়া যেয়ো না, শোনো শোনো,
সূর্য অস্ত যায় নি এখনো।
সময় রয়েছে বাকি;
সময়েরে দিতে ফাঁকি
ভাবনা রেখো না মনে কোনো।
পাতার আড়াল হতে বিকালের আলোটুকু এসে
আরো কিছুখন ধরে ঝলুক তোমার কালো কেশে।
হাসিয়া মধুর উচ্চহাসে
অকারণ নির্মম উল্লাসে,
বনসরসীর তীরে
ভীরু কাঠবিড়ালিরে
সহসা চকিত কোরো ত্রাসে।
ভুলে-যাওয়া কথাগুলি কানে কানে করায়ে স্মরণ
দিব না মন্থর করি ওই তব চঞ্চল চরণ।
তার পরে যেয়ো তুমি চলে
ঝরা পাতা দ্রুতপদে দোলে,
নীড়ে-ফেরা পাখি যবে
অস্ফুট কাকলিরবে
দিনান্তেরে ক্ষুব্ধ করি তোলে।
বেণুবনচ্ছায়াঘন সন্ধ্যায় তোমার ছবি দূরে
মিলাইবে গোধূলির বাঁশরির সর্বশেষ সুরে।
রাত্রি যবে হবে অন্ধকার
বাতায়নে বসিয়ো তোমার।
সব ছেড়ে যাব, প্রিয়ে,
সমুখের পথ দিয়ে,
ফিরে দেখা হবে না তো আর।
ফেলে দিয়ো ভোরে-গাঁথা ম্লান মল্লিকার মালাখানি।
সেই হবে স্পর্শ তব, সেই হবে বিদায়ের বাণী।

মিলন
কাব্যগ্রন্থ-পুরবী

মিলন
কাব্যগ্রন্থ-পুরবী
জীবন-মরণের স্রোতের ধারা
যেখানে এসে গেছে থামি
সেখানে মিলেছিনু সময়হারা
একদা তুমি আর আমি।
চলেছি আজ একা ভেসে
কোথা যে কত দূর দেশে,
তরণী দুলিতেছে ঝড়ে–
এখন কেন মনে পড়ে
যেখানে ধরণীর সীমার শেষে
স্বর্গ আসিয়াছে নামি
সেখানে একদিন মিলেছি এসে
কেবল তুমি আর আমি।
সেখানে বসেছিনু আপন-ভোলা
আমরা দোঁহে পাশে পাশে।
সেদিন বুঝেছিনু কিসের দোলা
দুলিয়া উঠে ঘাসে ঘাসে।
কিসের খুশি উঠে কেঁপে
নিখিল চরাচর ব্যেপে,
কেমনে আলোকের জয়
আঁধারে হল তারাময়,
প্রাণের নিশ্বাস কী মহাবেগে
ছুটেছে দশদিক্গামী–
সেদিন বুঝেছিনু যেদিন জেগে
চাহিনু তুমি আর আমি।
বিজনে বসেছিনু আকাশে চাহি
তোমার হাত নিয়ে হাতে।
দোঁহার কারো মুখে কথাটি নাহি,
নিমেষ নাহি আঁখিপাতে।
সেদিন বুঝেছিনু প্রাণে
ভাষার সীমা কোন্খানে,
বিশ্বহৃদয়ের মাঝে
বাণীর বীণা কোথা বাজে,
কিসের বেদনা সে বনের বুকে
কুসুমে ফোটে দিনযামী–
বুঝিনু যবে দোঁহে ব্যাকুল সুখে
কাঁদিনু তুমি আর আমি।
বুঝিনু কী আগুনে ফাগুন-হাওয়া
গোপনে আপনার দাহে,
কেন-যে অরুণের করুণ চাওয়া
নিজেরে মিলাইতে চাহে,
অকূলে হারাইতে নদী
কেন যে ধায় নিরবধি,
বিজুলি আপনার বাণে
কেন যে আপনারে হানে,
রজনী কী খেলা যে প্রভাত-সনে
খেলিছে পরাজয়কামী–
বুঝিনু যবে দোঁহে পরান-পণে
খেলিনু তুমি আর আমি।

বিদায়
কাব্যগ্রন্থ- মহুয়া

বিদায়
কাব্যগ্রন্থ- মহুয়া
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও।
তারি রথ নিত্যই উধাও
জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন,
চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন।
ওগো বন্ধু, সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল–
তুলে নিল দ্রুতরথে
দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে
তোমা হতে বহুদূরে।
মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে
পার হয়ে আসিলাম
আজি নবপ্রভাতের শিখরচূড়ায়,
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
আমার পুরানো নাম।
ফিরিবার পথ নাহি;
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়।
হে বন্ধু, বিদায়।
কোনোদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে,
বসন্তবাতাসে
অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,
ঝরা বকুলের কান্না ব্যথিবে আকাশ,
সেইক্ষণে খুঁজে দেখো, কিছু মোর পিছে রহিল সে
তোমার প্রাণের প্রান্তে; বিস্মৃতপ্রদোষে
হয়তো দিবে সে জ্যোতি,
হয়তো ধরিবে কভু নামহারা-স্বপ্নের মুরতি।
তবু সে তো স্বপ্ন নয়,
সব চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয়,
সে আমার প্রেম।
তারে আমি রাখিয়া এলেম
অপরিবর্তন অর্ঘ্য তোমার উদ্দেশে।
পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে
কালের যাত্রায়।
হে বন্ধু, বিদায়।
তোমার হয় নি কোনো ক্ষতি
মর্তের মৃত্তিকা মোর, তাই দিয়ে অমৃত-মুরতি
যদি সৃষ্টি করে থাক, তাহারি আরতি
হোক তব সন্ধ্যাবেলা।
পূজার সে খেলা
ব্যাঘাত পাবে না মোর প্রত্যহের ম্লানস্পর্শ লেগে;
তৃষার্ত আবেগবেগে
ভ্রষ্ট নাহি হবে তার কোনো ফুল নৈবেদ্যের থালে।
তোমার মানসভোজে সযত্নে সাজালে
যে ভাবরসের পাত্র বাণীর তৃষায়,
তার সাথে দিব না মিশায়ে
যা মোর ধূলির ধন, যা মোর চক্ষের জলে ভিজে।
আজও তুমি নিজে
হয়তো বা করিবে রচন
মোর স্মৃতিটুকু দিয়ে স্বপ্নাবিষ্ট তোমার বচন।
ভার তার না রহিবে, না রহিবে দায়।
হে বন্ধু, বিদায়।
মোর লাগি করিয়ো না শোক,
আমার রয়েছে কর্ম, আমার রয়েছে বিশ্বলোক।
মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই,
শূন্যেরে করিব পূর্ণ, এই ব্রত বহিব সদাই।
উৎকণ্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে
সেই ধন্য করিবে আমাকে।
শুক্লপক্ষ হতে আনি
রজনীগন্ধার বৃন্তখানি
যে পারে সাজাতে
অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ-রাতে,
যে আমারে দেখিবারে পায়
অসীম ক্ষমায়
ভালোমন্দ মিলায়ে সকলি,
এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।
তোমারে যা দিয়েছিনু, তার
পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার।
হেথা মোর তিলে তিলে দান,
করুণ মুহূর্তগুলি গণ্ডূষ ভরিয়া করে পান
হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম।
ওগো তুমি নিরুপম,
হে ঐশ্বর্যবান,
তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান;
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
হে বন্ধু, বিদায়।

গভীর প্রেম নিয়ে লেখা কিছু ছন্দ, Some short poems written about Intense love :

শোনো, কাজল চোখের মেয়ে
আমার দিবস কাটে, বিবশ হয়ে
শোনো, কাজল চোখের মেয়ে
আমার দিবস কাটে, বিবশ হয়ে
তোমার চোখে চেয়ে।
দহনের দিনে, কিছু মেঘ কিনে
যদি ভাসে মধ্য দুপুর
তবু মেয়ে জানে, তার চোখ মানে
কারো বুক পদ্মপুকুর।
এই যে মেয়ে, কজল চোখ
তোমার বুকে আমায় চেয়ে
তীব্র দাবির মিছিল হোক।
তাকাস কেন?
আঁকাস কেন, বুকের ভেতর আকাশ?
কাজল চোখের মেয়ে
তুই তাকালে থমকে থাকে
আমার বুকের বাঁ পাশ।

আবার যখন দেখা হবে,
 খানিক যদি থমকে যাই
বেলিফুলের গন্ধে কোথাও,
একটুখানি চমকে যাই।
তাকিও তখন চোখে
হাসিমুখের বুকের ভেতর কে কেঁপে যায় শোকে!

তোমার একটা নাম থাকুক আমার দেয়া
মেঘের মেয়ে, নদী কিংবা জলজ খেয়া
আমার দেয়া একখানা নাম তোমার থাকুক
না হয় আমি হারিয়ে গেলেও
একলা একা সন্ধা তারা
সেই নামেই তোমায় ডাকুক।
 

এলোকেশী মেয়ে কার পথ চেয়ে, মেলেছিলে ঐ কেশ?
পথ চাওয়া শেষে, এসেছিল কী সে? ছুয়ে মেঘ অনিমেষ।
এলোকেশী মেয়ে, মেঘবেলা ধেয়ে, এসেছে কী তার ঢল?
তুমি কার জলে, তোমার ভেজালে? ভাসালেই প্রেমাচল!
দেখেনিতো চেয়ে, এলোকেশী মেয়ে, আর কেউ ছিল তার
কী বিষাদে পুড়ে, তার বুক জুড়ে, কেঁদেছে বিরহী সেতার।

তুমি হলে রোদ
হোক অবরোধ
শহরের মেঘে।
তুমি হলে জল
স্নান অবিরল
তোমাকেই মেখে।
আর যদি কেউ
হতে চায় ঢেউ
অবছাড়া চোখে।
ভেকে যাক আজ
অচেনা জাহাজ
তুমি নেই শোকে।

চিঠির ভাঁজে জমেছিল মন
মনের ভাঁজে তোমার নিমন্ত্রণ
অথচ সে ঘুরল শহর জুড়ে
ঠিকানাহীন দীর্ঘ নির্বাসন।
লুকিয়ে রাখা চিঠি
চিঠির ভাজে আস্ত মানুষ থাকে
এই শহরের ফুলগুলোও জানে
মানুষ তার মনের জন্য সুবাস জমা রাখে।

শান্ত নদীর ঢেউয়ের মাঝে,
মনটা শুধু তোমায় খোঁজে!
বসে আছি তাই নদীর তীরে,
কতো যে স্বপ্ন তোমায় ঘিরে!
তুমি শুধু আমার হবে,
সব সময় আমার পাশে রবে!

কুড়িয়ে নিয়েছি সব, জমা ছিল যত
পুরনো স্মৃতির দিন, বেদনার ক্ষত
কুড়িয়ে নিয়েছি সব, জমা ছিল যত
পুরনো স্মৃতির দিন, বেদনার ক্ষত
পিছুটান পিছে ফেলে সীমানা ছাড়াই
তবু যেতে যেতে কেন থমকে দাঁড়াই।
উড়িয়ে দিয়েছি ঘুড়ি সুতোটুকু কেটে
পুড়িয়ে দিয়েছি চিঠি জমা বুক পকেটে
এখন পথিক হয়ে পথে পা বাড়াই
তবু যেতে যেতে কেন থমকে দাঁড়াই।
আয়নায় জেগেছিল কাজল দু চোখ
লেগেছিল লাল টিপ, স্মৃতির সূচক
তার সব ভেঙ্গে কাচ দু পায়ে মাড়াই
তবু যেতে যেতে কেন থমকে দাঁড়াই।

রেখে যাওয়া দাগ কেউ চেনে
কেউ চেনে স্মৃতিদের রং
কেউ কেউ জমা করে রোখে, দুঃখ বরং।
কেউ কেউ চোখ ঢেকে কাঁদে
কেউ চুপিচুপি রাখে খোঁজ।
মনে রাখা, নাকি ভুলে যাওয়া?
কী বেশি সহজ?

তুমি যখন যেভাবেই ফিরে আসো,
তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার
সাধ্য আমার নেই।
তুমি আমার রক্তে মিশে গেছো।
আর রক্ত কিভাবে ধুয়ে
ফেলতে হয় আমি জানি না।

দৃষ্টি’র দূরে অপেক্ষারত
আমি দাঁড়িয়ে তোমার প্রতীক্ষায়
বাঁ হা’তি রাস্তা চলে গেছে নিশ্চিন্তপুর
ডান হা’তি রাস্তায় ফুলে’র বাগান;
মাঝখানে বয়ে গেছে নদী নিরবধী…
জেনো- মনে মন মিললে’ই হয় আয়োজন।
এসব রোদের পরে পড়ে থাকবে আমার ছায়া
অদৃশ্য পদচিহ্ন তোমার হৃদয়ে
ফুরিয়ে যাওয়া কথা’রা
হাওয়ার ছন্দপতন
প্রিয়তমা!
তোমার বিকেল পোড়ে যাবে শোকে
তোমার উঠোন পোড়ে যাবে জোৎস্নায়
বৃষ্টির ফোঁটার মত টুপটাপ ঝরে পড়বে সময়…
সব বিষাদ একদিন প্রেম হয়ে যাবে-
দ্যাখো প্রিয়তমা! একদিন প্রেম হয়ে যাবে।

তুমি বলেছিলে আমি তোমার সকল সুখ,
তুমি বলেছিলে আমি তোমার সকল সুখ,
আমি ভেবে নিয়ে ছিলাম তোমার সময় নষ্টের কারণ;
তুমি বলেছিলে আমি বিহীন তোমার জীবন শূন্য মরুভূমি,
আমি বুঝে গেলাম তোমার বুকে অন্য কেউ।
তুমি বলেছিলে আমার সাথে কথা না বলে তোমার ভালো লাগে না।
আমি বুঝে গেলাম আমি এখন তোমার বিরক্তের কারণ;
তুমি বলেছিলে সন্ধ্যা আকাশে তারা অনেক দেখতে ভালো লাগে।
আমি বুঝে গেলাম তুমি মেলায় যেতে চায়;
তুমি বলেছিলে তোমার হাতে হাত রেখে হাঁটতে অনেক ভালো লাগে;
আমি ভেবে নিলাম তোমার হাতে হয়তো অন্য কারো আংটি।
তুমি বলেছিলে বই পড়তে অসম্ভব ভালোবাসো।
আমি বুঝে গেলাম নতুন কোন গল্প শুনতে চায়;
এভাবে এভাবে ভালোবাসার গল্প হলো তৈরি।
হঠাৎ তুমি বলেছিলে দিন দিন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছো তুমি,
আমি বুঝে গেলাম বিচ্ছেদ চাইতাছো তুমি।
হয়তো সেই থেকে মুক্তি হলা তুমি।
আর বিচ্ছেদের কষ্টে পুড়ে পুড়ে ছাঁই হলাম আমি ;;
তারপর, হঠাৎ চার বছর পর দেখা হলো তোমার আমার; ট্রেনে।
তোমার কোলে ফুটফুটে একটা বাচ্চা, সেই তোমার মতো হয়েছে।
ট্রেনের প্রথম কথা কেমন ছিলো জানি! তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে,
“কেমন আছেন আপনি”…? তখন থেকে বুঝে গেলাম, পর হয়ে গেছি আমি………..।

বিচ্ছেদের পর কখনো রাস্তায় আমাদের দেখা হলে,
আমরা কেউ কাউকে না দেখার মতো করে এমনভাবে পাশাপাশি হেঁটে গেছি,
যেনো আমাদের আগে কখনো পরিচয় হয়নি।
আমরা একজন অন্যজনকে এমনভাবে অগ্রাহ্য করেছি,
যেনো আমাদের একে অপরের প্রতি কোনোদিন কোনো টান ছিলো না।
ভালোবাসা ছেড়ে যাবার পর যখন আমরা সংসারী হলাম,
আমরা একজন অন্যজনকে কখনো মনে না রাখার মতো করে ভুলে গেছি।
শুধু বুকে আগলে রেখেছি কিছু স্মৃতি আর কারো অস্তিত্ব যা কখনো অপরিচিত ছিলো না,
কিংবা যা কখনো অগ্রাহ্য করা যাবে না।

তোমার সুখের পশরা আমি যদি হই তবে জেনে নিও-
আজ থেকে তুমি-আমি আলাদা।
আজ থেকে হবে বিচ্ছেদ, না দেখার পালা।
আর গাওয়া হবে না অপেক্ষার গান, বলা হবে না তুমি প্রাণ,
চোখের দৃষ্টি আর খুঁজবে না কারো মুখ,
এলো চুল আর কৃষ্ণ চোখ।
মাছ যেমন স্বস্তিতে সাঁতার কাটে পানিতে-
আজ থেকে আমিও তেমন কাটবো সাঁতার দুঃখেতে।
অভিযোগ নেই, নেই আর কোন অনুরোধ ফিরে আসার…
বুঝবো আমি আমার সুখ হয়ে গেছে কোন এক শকুনের আহার।
কাউকে নিয়ে চিন্তার বিলোপ আজ থেকে শুরু,
বুঝে নিও-
আজ আমি নিজেই কর্ণধার নিজেকে নিয়ে পুরো।

জানি, তোকে ছাড়াই আমার কেটে যাবে কয়েকটা বছর,
জানি, তোকে ছাড়াই আমার কেটে যাবে কয়েকটা বছর,
কয়েকটা যুগ তোকে ছাড়াই-.
শুনতে পাব ভোরের আকাশে উড়ন্ত পাখির কলরব-
দেখতে পাবো ধুধু করা মাঠের পাশে বয়ে চলা যৌবনা নদী
তবুও, আমি হারিয়ে যাব তোকে খোঁজার ছলে,
নিরুদ্দেশের দেশে।
জানি, এক টুকরো ভালোবাসা খুঁজে পাব দূর আকাশের নিচে-
তারার মাঝে গাংচিলেরা এসে নিয়ে যেতে চাইবে,
দিগন্তের ওপারে !
শুভ্র বরফের মাঝে কোন এক এক্সিমোরা আমাকে নিয়ে গান লিখবে।
তবুও, তোকে ভুলবো না কোনদিন,
শুধু একটিবার তোকে ছুঁয়ে দেখার আশায়।
তোর অপেক্ষায় চাতক হয়ে মরতে চাই আমি-
তোর জন্য আমার চির বসন্তের দেশে যাওয়ার স্বপ্ন ঘুচে যাবে।
তোর জন্য হয়তো বা কষ্ট আর বেদনারা হবে আমার প্রতিবেশী।
তবুও, স্বপ্নে বিভোর হয়ে
উদ্ভ্রান্ত মেঘের সাথে দল দেব না আর,
শুধুই তোকে চাইবো,আর বলব একবার বেড়াতে-
এসো সুখ ! আমার ঘরে।

আমি সেই মানুষটাই খুঁজেছি
আমি সেই মানুষটাই খুঁজেছি
যে মানুষটা আমাকে নীরব অভিমানি আলাপনে
আগলে রাখবে চোখের দুষ্ট-মিষ্টি শাসনে যত্নে রাখবে।
 অথচ এই ভালোবাসা ময় পৃথিবীতে
কোটি মানুষের ভীড়ে
শুধু মনের মানুষটারি বড্ড অভাব।
তবুও ওই না ছোঁয়া অবয়বেই হারানো আমার স্বভাব।

আমার আমি পূর্ণ থাকি, পাশে থাকো যখন।
আমার আমি পূর্ণ থাকি, পাশে থাকো যখন।
রাত না হতেই তোমার কথা বড্ড মনে পড়ে,
চোখের কোণে নোনা জল অঝর ধারায় ঝরে।
সকাল হতেই এক ছুটে যাই তোমার হৃদয় পানে,
“ভালোবাসি” বোলো তখন আমায় কানে কানে।
সেই মধুর শব্দে আমি প্রাণ খুঁজে যে পাই,
এইটা পেলেই ধন্য আমি, আর চাওয়ার কিছুই নাই।

শেষ কথা, Conclusion :

গভীর ভালোবাসার কবিতা বলতে বোঝায়, যে কবিতায় মানুষের প্রেম, ভালবাসার, আবেগ, অনুভূতি, থাকে। অনলাইনে অনেকেই নিজের ভালোবাসার মানুষকে উৎসর্গ করার জন্য গভীর প্রেমের কবিতা খোঁজ করে থাকেন। আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা কবিতাগুলোর মধ্য দিতে আপনাদের খোঁজে সমাপ্তি ঘটবে। কবিতাগুলো আপনাদের মনোগ্রাহী হলে অবশ্যই আপনার পরিবার পরিজন ও বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন।

RIma Sinha

Rima Sinha is a professional journalist and writer with a strong academic background in media and communication. She holds a Bachelor of Arts from Tripura University and a Master’s degree in Journalism and Mass Communication from Chandigarh University. With experience in reporting, feature writing, and digital content creation, Rima focuses on delivering accurate and engaging news stories to Bengali readers. Her commitment to ethical journalism and storytelling makes her a trusted voice in the field.

Recent Posts