ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি কথা ও কাজের পেছনে গভীর অর্থ ও গুরুত্ব নিহিত। মুসলিম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এই মহিমা ঘোষণার অন্যতম সুন্দর ও পবিত্র শব্দ হলো “সুবহানাল্লাহ”। এটি আরবি শব্দ, যার অর্থ “আল্লাহ সকল ত্রুটি ও অপূর্ণতা থেকে পবিত্র” বা “আল্লাহ মহান, তিনি ত্রুটিমুক্ত”। এটি মুসলিমদের অন্যতম প্রশংসাসূচক বাক্য যা তারা নিয়মিতভাবে বলে থাকে।
“সুবহানাল্লাহ” শব্দটি মূলত আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা, নির্দোষিতা এবং পূর্ণতার ঘোষণা। এটি বলার মাধ্যমে আমরা স্বীকার করি যে, আল্লাহ কোনো দুর্বলতা, ভুল বা ত্রুটির ঊর্ধ্বে।তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, বিচারক এবং সর্বজ্ঞানী। এই শব্দটি শুধু মুখের উচ্চারণ নয়; এটি মনের গভীর অনুভূতি ও বিশ্বাস থেকেও প্রকাশ পায়।
সুবহানাল্লাহ আরবি, Subhanallah Arabic
সুবহানাল্লাহ” শব্দটি আরবি শব্দ (سُبْحَانَ ٱللَّٰهِ) থেকে এসেছে। এর অর্থ হল “আল্লাহ্র মহিমা” বা “আল্লাহ অসম্পূর্ণতা থেকে মুক্ত”। এটি সাধারণত আল্লাহর প্রশংসা এবং পবিত্রতা প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সুবহানাল্লাহ নাকি সুবহানআল্লাহ, Subanallah or Subhan Allah?
সঠিক শব্দটি হল “সুবহানাল্লাহ”। এটি আরবি শব্দ “سُبْحَانَ ٱللَّٰهِ” (Subḥān Allāh) এর বাংলা প্রতিবর্ণীকরণ। এর অর্থ “আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি”বা আল্লাহ কত মহান”।এটি সাধারণত আল্লাহর মহিমা বা সৌন্দর্যের প্রশংসা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। “সুবহানআল্লাহ” একটি ভুল বানান।

সুবহানাল্লাহ ইংরেজি, Subhanallah English
“সুবহানাল্লাহ” (Subhanallah) একটি আরবি শব্দ যা বাংলাতে “সুবহানাল্লাহ” হিসেবে লেখা হয়। এর ইংরেজি অনুবাদ হলো “Glory be to God”, “Praise be to Allah”, বা “Allah is perfect”. এটি সাধারণত বিস্ময়, প্রশংসা, বা আল্লাহর মহিমা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
মাশাল্লাহ ও সুবহানাল্লাহ এর মধ্যে পার্থক্য কি? What is the difference between Mashallah and Subhanallah?
সুবহানাল্লাহ মানে আল্লাহর প্রশংসা করা। যখন মুসলিমরা কিছু পছন্দ করে তখন তারা বলেন সুবহানাল্লাহ। অন্যদিকে মাশাআল্লাহ সুসংবাদ পেলে, সুন্দর বা ভালো কিছু দেখলে বলা হয়।
সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত, The virtue of saying Subhanallah
সুবহানাল্লাহ বলার অনেক ফজিলত রয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জিকির, যা মুসলিমরা সাধারণত আল্লাহর মহিমা বর্ণনার জন্য ব্যবহার করে থাকে।সুবহানাল্লাহ বলার মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও পবিত্রতা ঘোষণা করা হয়। এটি নিয়মিত পাঠ করা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
সুবহানাল্লাহ বলার কিছু ফজিলত নীচে দেওয়া হল:-
- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন:সুবহানাল্লাহ পাঠ করা আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
- পাপ মোচন:যারা নিয়মিত সুবহানাল্লাহ পাঠ করে, তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা ছোট ছোট গুনাহ মাফ করে দেন।
- নেক আমলের পাল্লা ভারী হওয়া:সুবহানাল্লাহ পাঠকারীর আমলের পাল্লা ভারী হয় এবং কিয়ামতের দিন তার নেকির পাল্লা ভারী হবে।
- জান্নাতে গাছ রোপণ:“সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি” পাঠ করলে জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হয়।
- আল্লাহর প্রশংসা করা:সুবহানাল্লাহ বলার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা করা হয় এবং বান্দা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করে।
- বিপদ থেকে মুক্তি:সুবহানাল্লাহ পাঠ করা বিপদ ও মুসিবত থেকে মুক্তি লাভের একটি মাধ্যম।
- সওয়াব অর্জন:সুবহানাল্লাহ পাঠ করা একটি সহজ ইবাদত, যা অল্প সময়ে বেশি সওয়াব লাভের সুযোগ করে দেয়।
- অন্যান্য জিকিরের সাথে পাঠ:সুবহানাল্লাহ পাঠের সাথে সাথে আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি জিকির পাঠ করা উত্তম।
সুবহানাল্লাহ বাংলা, Subhanallah Bangla
“সুবহানাল্লাহ” একটি আরবিশব্দ যা বাংলা ভাষায় “সুবহানাল্লাহ” হিসেবেই উচ্চারিত হয়। এর অর্থ হলো “আল্লাহ্ কতই না পবিত্র” বা “আল্লাহ্ মহান”। এটি সাধারণত আল্লাহর মহিমা, সৌন্দর্য বা কোনো আশ্চর্যজনক ঘটনার পর তাঁর পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করার জন্য বলা হয়ে থাকে।
“সুবহানাল্লাহ” শব্দের অর্থ:
আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা:এই শব্দটি দ্বারা আল্লাহর সকল প্রকার ত্রুটি ও অপূর্ণতা থেকে মুক্ত হওয়া এবং তাঁর মহিমা প্রকাশ করা হয়।
আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করা:যখন কেউ কোনো সুন্দর জিনিস দেখে বা কোনো আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে, তখন “সুবহানাল্লাহ” বলার মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টিশীলতা ও শক্তির স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা:কোনো বিপদ থেকে রক্ষা পেলে বা কোনো ভালো কিছু ঘটলে, “সুবহানাল্লাহ” বলার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
সুতরাং, “সুবহানাল্লাহ” শব্দটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক অভিব্যক্তি যা আল্লাহকে স্মরণ ও তাঁর প্রতি সম্মান জানানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

সুবহানাল্লাহ ওয়াবিহামদিহি, Subhanallah Wa Bihamdihi
“সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি” একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক তাসবিহ বা জিকির। এর অর্থ “আমি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি”। এটি একটি দোয়া যা পাঠ করলে মহান আল্লাহর প্রশংসা করা হয় এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়।
এই তাসবিহটি “সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম” বাক্যের অংশ। এর পুরো অর্থ হল: “আমি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ।”
এই তাসবিহ পাঠের অনেক ফজিলত বা গুরুত্ব রয়েছে। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ বলবে, তার সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণও হয়।”অন্য একটি হাদিসে আছে, “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বাক্য হলো ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’।”
সুতরাং, “সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি” একটি গুরুত্বপূর্ণ তাসবিহ যা নিয়মিত পাঠ করা উচিত। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি সহজ উপায় এবং গুনাহ মাফের একটি মাধ্যম।
Also check out: মাশাল্লাহ এর উত্তর কি
শুকুর আলহামদুলিল্লাহ আরবি, Shukar Alhamdulillah Arabic
সুবহানাল্লাহ একটি আরবি শব্দ যা “সুবহান” এবং “আল্লাহ” শব্দ দুটি থেকে এসেছে। এর অর্থ হল, “আল্লাহ তা’আলা পবিত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ”। এর দ্বারা আল্লাহর মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয় এবং সকল অপূর্ণতা থেকে তাকে পবিত্র ঘোষণা করা হয়।
আরও বিস্তারিতভাবে, “সুবহান” শব্দের মূল অর্থ হলো, “মহিমান্বিত করা” বা “পবিত্র ঘোষণা করা”। যখন “সুবহানাল্লাহ” বলা হয়, তখন এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, আল্লাহ তা’আলা সকল দোষ-ত্রুটি ও অপূর্ণতা থেকে মুক্ত এবং তিনি সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। এটি একটি দোয়া বা স্বীকৃতি যে, আল্লাহ সবকিছু থেকে মহান এবং তার কোন তুলনা নেই।
সুবহানাল্লাহ বললে কি বলতে হয়, What to say when you say Subhanallah?
“সুবহান” শব্দের অর্থ হল পবিত্রতা আর “আল্লাহ” শব্দটি বলতে বোঝায় সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তাকে। তাই, সুবহানাল্লাহ বলার মাধ্যমে মূলত আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা প্রকাশ করা হয় এবং বোঝানো হয়। শুধু তাই নয় এতে বোঝানো হয় আল্লাহ সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি ও অপূর্ণতা থেকে মুক্ত।
এটি সাধারণত বলতে হয়
আল্লাহর সৃষ্টির বিস্ময়কর নিদর্শন দেখলে বা কোনো সুন্দর জিনিস দেখলে।
কারো কাছ থেকে ভালো কিছু শুনলে বা কোনো ভালো খবর পেলে।
সালাত (নামাজ) বা দোয়ার পর।

পরিশেষে
আমরা যখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখি, কোনো ভালো সংবাদ শুনি বা বিস্ময়কর কিছু প্রত্যক্ষ করি, তখন “সুবহানাল্লাহ” বলা আমাদের ঈমানদারিত্বের প্রকাশ।এটি আমাদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জাগায়। শুধু তাই নয়, দৈনন্দিন যিকির হিসেবেও এটি মহান আল্লাহর স্মরণে সহায়ক।
“সুবহানাল্লাহ” একটি ছোট শব্দ হলেও এর মধ্যে লুকিয়ে আছে মহান বার্তা। এটি বললে আমাদের হৃদয় পরিশুদ্ধ হয়, আত্মা শান্তি পায় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সহজ হয়।
তাই আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে এই পবিত্র শব্দ উচ্চারণ করা এবং এর গভীর তাৎপর্য অনুধাবন করে আল্লাহর প্রশংসা করা। সুবহানাল্লাহ আল্লাহ পাক সকল ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা থেকে পবিত্র!
আশা করছি আমাদের এই প্রতিবেদনটি আপনাদের পছন্দ হবে। যদি পছন্দ হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনি আপনাদের বন্ধু, আত্মীয় স্বজন ও চেনা পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে পারেন।