আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে ChatGPT এক বিস্ময়কর উদ্ভাবন। মানুষের মতো সাবলীল ভাষায় কথোপকথন, জটিল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কিংবা সৃজনশীল লেখালেখিতেও তার দক্ষতা অবাক করার মতো। তবে, এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিটিরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা হয়তো অনেকেরই অজানা। ভাবছেন ChatGPT বুঝি সবকিছু করতে পারে? তাহলে আপনার ধারণা ভুল! এমন কিছু কাজ আছে যা ChatGPT-এর ক্ষমতার বাইরে।
আসুন, সেই বিষয়গুলো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
১. লাইভ ডেটার অভাব: পুরনো তথ্যই ভরসা!
গুগলের মতো ChatGPT রিয়েল-টাইম তথ্য সরবরাহ করতে পারে না। এর জ্ঞানের ভান্ডার মূলত সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্তের ডেটা দ্বারা সীমাবদ্ধ। তাই, বর্তমানে বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে, তা জানার জন্য আপনাকে অন্য উৎসের উপর নির্ভর করতে হবে। লাইভ খবর বা অনলাইন ইভেন্টের ফলাফলও এর কাছে পাওয়া যাবে না।
ইন্টারনেট ব্রাউজ করে নতুন তথ্য আনা বা সোশ্যাল মিডিয়ার সাম্প্রতিক পোস্টগুলিও এটি আপনাকে জানাতে পারবে না। এর উত্তরগুলি সেই ট্রেনিং ডেটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, যা এটিকে নতুন বা চলমান ঘটনা সম্পর্কে অজ্ঞ করে রাখে।
২. ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশাধিকার নেই:
আপনার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে লগইন করা বা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে কোনো কাজ করার ক্ষমতা ChatGPT-এর নেই। উদাহরণস্বরূপ, এটি আপনার ইমেল পাঠানো বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো পোস্ট করতে পারবে না। এমনকি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা সামাজিক মাধ্যমের কোনো তথ্য বা ব্যবস্থাপনারও এটি ধারেকাছে ঘেঁষতে পারবে না।
আপনার গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্যই এই গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। আপনার ব্যক্তিগত ডেটা অ্যাক্সেস না করেই এটি তার কাজ করে।
৩. সৃজনশীলতা ও মানবিক অনুভূতির অনুপস্থিতি:

ভাষাগতভাবে অত্যন্ত দক্ষ হলেও, ChatGPT-তে মানবিক অনুভূতি বা সৃজনশীলতার অভাব রয়েছে। মানুষের মতো আবেগ, ভালোবাসা বা ঘৃণা প্রকাশ করার ক্ষমতা এর নেই। কোনো শিল্পকর্ম বা গান তৈরি করা যা একজন মানুষের হৃদয় থেকে উৎসারিত হয়, তা এর পক্ষে সম্ভব নয়।
এটি কেবল তথ্য প্রদান এবং সমস্যা সমাধানে পারদর্শী, কিন্তু নতুন সৃজনশীল ধারণা বা গভীর মানসিকতার প্রকাশ এর দ্বারা সম্ভব নয়।
৪. ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান:
পৃথিবীর অসংখ্য ভাষায় কাজ করতে পারলেও, বিশ্বের সকল ভাষা বা সংস্কৃতি সম্পর্কে এর জ্ঞান সীমিত। সব ভাষায় এটি সমান সাবলীল নয়, এবং ভাষাগত ত্রুটি বা ভুল হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কোনো নির্দিষ্ট দেশের সংস্কৃতি বা রীতিনীতি সম্পর্কে সবসময় সঠিক ধারণা নাও থাকতে পারে।
যেহেতু এটি শুধুমাত্র ট্রেনিং ডেটার উপর ভিত্তি করে কাজ করে, তাই কোনো নির্দিষ্ট সংস্কৃতির গভীরতা বা বৈচিত্র্য এড়িয়ে যাওয়া এর পক্ষে স্বাভাবিক।
পরিশেষে বলা যায়, ChatGPT নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রযুক্তি, যা বহু কাজকে সহজ করে তুলেছে। এর অটোমেটিক ইনপুট-আউটপুট ফাংশন সাধারণ কাজগুলির জন্য খুবই উপযোগী। তবে, এর সীমাবদ্ধতাগুলিও আমাদের মনে রাখতে হবে।
গভীর মানবিক অনুভূতি, সৃজনশীলতা এবং বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য এখনও মানুষের বিকল্প নেই। তাই, ChatGPT-এর উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর না করে, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।