পেট্রোল পাম্পে লম্বা লাইনের দিন কি শেষ হতে চলেছে? স্কুটার চলবে নুনে! শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, এটাই বাস্তব হতে চলেছে। চীনের যুগান্তকারী আবিষ্কারের হাত ধরে এবার সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারির যুগে প্রবেশ করতে চলেছে বিশ্ব। এই নতুন প্রযুক্তি শুধু স্কুটারে নয়, ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সঞ্চয় কেন্দ্র চালাতেও সক্ষম হবে।
বিদ্যুতের নতুন দিগন্ত : সোডিয়াম-আয়ন
ইতিমধ্যেই চীনের গুয়াংজি প্রদেশে একটি সোডিয়াম ব্যাটারির বিদ্যুৎ স্টোরেজ কেন্দ্র চালু হয়েছে, যা প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার পরিবারকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির স্বল্পমূল্য এবং কার্যকারিতার দৌড়ে যখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ চীনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন চীন ব্যাটারি খাতে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।
গণহারে সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদনের পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে দেশটি, এবং এবার তারা এই প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করতে ব্যবহার করছে ইলেকট্রিক স্কুটার। এমনই খবর জানাচ্ছে সংবাদ মাধ্যমগুলো।
স্কুটারের নতুন বিপ্লব : লবণ থেকে শক্তি
চীনের অন্যতম বৈদ্যুতিক টু-হুইলার নির্মাতা ইয়াদিয়া সম্প্রতি নতুন ইলেকট্রিক স্কুটার পরীক্ষা করা শুরু করেছে। এই স্কুটারগুলোর ব্যাটারি লিথিয়াম আয়নের বদলে সোডিয়াম থেকে তৈরি। মজার ব্যাপার হলো, সমুদ্রের জল থেকে যে লবণ সংগ্রহ করা হয়, তা থেকেই সহজে এই ব্যাটারি তৈরি করা যায়। এর ফলে এই স্কুটারের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে – মোটামুটিভাবে ৩০ থেকে ৫১ হাজার টাকার মধ্যে এর দাম থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, অর্থাৎ, সাধারণ স্কুটার বা ইভি স্কুটারের থেকে অনেক কম দামে এটি পাওয়া যাবে।

ইয়াদিয়া ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে একটি প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে প্রথম এই সোডিয়াম-চালিত মডেলগুলো প্রদর্শন করে। সেখানে দ্রুত চার্জিং পিলারও দেখানো হয়, যা মাত্র ১৫ মিনিটে ব্যাটারির ৮০ শতাংশ চার্জ দিতে সক্ষম।
এছাড়াও ছিল ব্যাটারি সোয়াপিং স্টেশন, যেখানে একটি কিউআর কোড স্ক্যান করে পুরোনো ব্যাটারি দিয়ে দ্রুত নতুন চার্জ করা ব্যাটারি বদলে নেওয়া যায়। ইয়াদিয়া এরই মধ্যে তিনটি সোডিয়াম-চালিত স্কুটার বাজারে এনেছে এবং আরও কয়েকটি মডেল আনার পরিকল্পনা করছে।
প্রতিষ্ঠানটি হ্যাংঝোতে ‘হুয়ায়ু নিউ এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ নামে একটি গবেষণা কেন্দ্রও চালু করেছে, যার লক্ষ্য নতুন ব্যাটারি প্রযুক্তি নিয়ে নিরন্তর কাজ করা।
সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারির এই নতুন আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি কেবল পরিবহণ খাতেই নয়, বিদ্যুৎ সঞ্চয় এবং সরবরাহের ক্ষেত্রেও এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।