মঙ্গল গ্রহে বসবাস সম্ভব? NASA-এর চমকপ্রদ পরিকল্পনা

মঙ্গল গ্রহে বসবাস সম্ভব?

মঙ্গল গ্রহের দিকে মানুষের আগ্রহ চিরকালই ছিল। “লাল গ্রহ” হিসেবে পরিচিত মঙ্গল, পৃথিবীর পরে দ্বিতীয় পৃথিবী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যদি বিজ্ঞানীরা এর পরিবেশে বসবাসের উপযোগিতা নিশ্চিত করতে পারেন। কিন্তু, মঙ্গল গ্রহে বসবাস করার জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং NASA কীভাবে এই লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে, তা জানলে আপনার অবাক হওয়া স্বাভাবিক।

মঙ্গল গ্রহের পরিবেশ পৃথিবীর তুলনায় অনেক ভিন্ন। এর মূল চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  1. অক্সিজেনের অভাব : মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৯৭% কার্বন ডাই অক্সাইড রয়েছে, এবং অক্সিজেন মাত্র ০.۱۳%। তাই মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেনের সংকট হতে পারে।
  2. খুবই শীতল পরিবেশ : মঙ্গল গ্রহের গড় তাপমাত্রা প্রায় -৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা পৃথিবীতে কোনো জীবিত প্রাণী সহ্য করতে পারে না, তাই তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  3. কম মাত্রায় মহাকর্ষ : মঙ্গলে পৃথিবীর মহাকর্ষের মাত্রা মাত্র ৩৮%। ফলে মানবদেহের শারীরিক কার্যাবলীও এতে প্রভাবিত হতে পারে।
  4. বায়ুমণ্ডলের পাতলাতা : মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর তুলনায় অনেক পাতলা, যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয় না। এই কারণে প্রাণীজগতের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

NASA’র ভবিষ্যত পরিকল্পনা :

NASA’র ভবিষ্যত পরিকল্পনা

NASA ও অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলি মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসবাসের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করছে। ২০৩০ সাল নাগাদ মঙ্গলে প্রথম মানব মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এই মিশনের সফলতার জন্য প্রযুক্তিগত, বৈজ্ঞানিক এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে।

নাসা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। কিন্তু মঙ্গলে মানুষের স্থায়ী বসবাসের আগে বিজ্ঞানীদের একাংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

আমেরিকার টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী স্কট সলোমন সম্প্রতি এক গবেষণায় জানিয়েছেন, মঙ্গলে মানুষের বসবাস শুরু হলে মানবদেহে উল্লেখযোগ্য বিবর্তন ও অভিযোজন ঘটতে পারে। তাঁর মতে, মঙ্গলে বসবাসের ফলে মানুষের গায়ের রং সবুজ হয়ে যেতে পারে এবং দৃষ্টিশক্তি কমতে পারে। এমনকি তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, মঙ্গলে বসবাসকারী মানুষের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জটিল পরিব্যক্তি (মিউটেশন), বিবর্তন ও পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।

সলোমন তাঁর বই ‘ফিউচার হিউম্যানস’ এ জানিয়েছেন যে, মঙ্গল গ্রহের প্রতিকূল আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হতে পারে। মঙ্গলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের মিউটেশন ঘটতে পারে, যার ফলস্বরূপ তাদের শরীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে। বিশেষত, মঙ্গল গ্রহের কম অভিকর্ষ এবং মহাজাগতিক রশ্মির উচ্চ বিকিরণের কারণে মানবদেহে এই পরিবর্তনগুলো ঘটবে।

মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে আকারে ছোট এবং সেখানে মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর ৩০ শতাংশেরও কম। এছাড়া, মঙ্গলে চৌম্বক ক্ষেত্র এবং ওজ়োন স্তরের অভাব রয়েছে, যা পৃথিবীতে মহাজাগতিক রশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি এবং সূর্য থেকে আধানযুক্ত কণার হাত থেকে মানবশরীরকে রক্ষা করে। এইসব কারণে, মঙ্গল গ্রহে মানুষের শরীরের গঠন পরিবর্তিত হতে পারে।

NASA’র ভবিষ্যত পরিকল্পনা

এছাড়া, মঙ্গলে জন্মানো নবজাতকের পেশি ও দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হতে পারে এবং হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। সলোমন আরও দাবি করেছেন যে, মঙ্গলে মানুষের শরীর বিকিরণের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য গায়ের রঙের বিবর্তন ঘটাবে। নতুন ধরনের ত্বকের রং তৈরি হতে পারে, যা মানুষের শরীরকে ওই বিকিরণের হাত থেকে কিছুটা সুরক্ষা দেবে।

অপরদিকে, মঙ্গলে ঘন সন্নিবদ্ধ বসবাসের কারণে মানুষ দূরের জিনিস দেখতে কম প্রয়োজন অনুভব করবে, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের কারণে মানুষ মঙ্গলের পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে, তাদের দৃষ্টিশক্তি আগের তুলনায় অনেকটাই কমে যেতে পারে।

সবমিলিয়ে, মঙ্গলে মানববসতি গড়ে তোলা চ্যালেঞ্জিং হলেও এটি ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

RIma Sinha

Rima Sinha is a professional journalist and writer with a strong academic background in media and communication. She holds a Bachelor of Arts from Tripura University and a Master’s degree in Journalism and Mass Communication from Chandigarh University. With experience in reporting, feature writing, and digital content creation, Rima focuses on delivering accurate and engaging news stories to Bengali readers. Her commitment to ethical journalism and storytelling makes her a trusted voice in the field.

Recent Posts