অনেকেরই ভুলে যাওয়ার সমস্যা থাকে, যা বিভিন্নভাবে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু এখন আর সমস্যা থাকবে না! কারণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা এমন এক অত্যাধুনিক যন্ত্র তৈরি করেছেন, যা আপনার স্মৃতিশক্তিকে নতুন মাত্রা দেবে।
ইলন মাস্কের মেমরি চিপ নিয়ে যখন দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা চলছে, তখন কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা আরও এক ধাপ এগিয়ে এমন একটি ডিভাইস নিয়ে এসেছেন যা সরাসরি মস্তিষ্কে স্থাপন করা যাবে এবং প্রয়োজনে এটি নিজে থেকেই বিলীন হয়ে যাবে।
ভুলে যাওয়ার সমস্যা এখন অতীত, স্মৃতি হবে হাতের মুঠোয় :
কল্পনা করুন, আপনার অতীতের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা, রোজকার ভুলে যাওয়া টুকিটাকি বিষয়, এমনকি একবার দেখা বা শোনা কোনো তথ্যও আপনার মনে থাকবে দিনের পর দিন! এমনই এক যুগান্তকারী যন্ত্র তৈরি করেছেন কোরিয়া ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকেরা। এই ডিভাইস মস্তিষ্কে স্থাপন করলে স্মৃতির পাতা একের পর এক খুলতে থাকবে, কোনো কিছু মনে করার জন্য আপনাকে আর জোর দিতে হবে না।
এই যন্ত্র মস্তিষ্কের কোষে মিশে যাবে!
ইলন মাস্কের মেমরি চিপ নিয়ে যখন নানা জল্পনা চলছে, তখন কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা আরও আধুনিক পথে হেঁটেছেন। তারা এমন একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন যা মাথায় বসালে আর অস্ত্রোপচার করে বার করার দরকার পড়বে না। এটি মস্তিষ্কের কোষের সঙ্গেই মিশে যাবে! সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, যদি এটি বার করার প্রয়োজন হয়, তাহলে এটি ‘মেডিক্যাল বর্জ্য’ হিসেবে জমা হবে না। কারণ এই যন্ত্রটি জলে দিব্যি দ্রবীভূত হতে পারবে!
গবেষকেরা এই যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন ‘PCL-TEMPO’। এটি পলিক্যাপ্রোল্যাকটন (PCL) নামে একটি বায়ো পলিমার দিয়ে তৈরি। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এমন জৈব অণু দিয়ে যন্ত্রটি বানানো হয়েছে যার মধ্যে তথ্য জমা থাকতে পারে। ঠিক যেমন ফোনের মেমরি চিপ ডেটা সংরক্ষণ করে, তেমনই এটি মানুষের মস্তিষ্কে ডেটা সংরক্ষণ করবে।
এই যন্ত্রটি প্রতি মুহূর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো জমা করে রাখতে পারবে। অতীতের স্মৃতি সংরক্ষণ করতেও সক্ষম হবে। শুধু তাই নয়, চাইলে এই যন্ত্রটিতে জমা তথ্য মুছেও ফেলা যাবে। কোনো খারাপ স্মৃতি যদি আপনি মনে রাখতে না চান, তাহলে সেই ডেটা মুছে দেওয়ার বিশেষ প্রযুক্তিও থাকবে যন্ত্রটিতে। তবে, যন্ত্রটি একটানা কত দিন চলবে এবং কী পরিমাণ তথ্য জমা রাখবে, তা এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি। এই নিয়ে গবেষণা চলছে।

যন্ত্রটির কার্যকারিতা এবং বিতর্ক:
গবেষকেরা দাবি করেছেন, যন্ত্রটি শরীরে বসালে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না। পুলিশ বা গোয়েন্দা বিভাগে যারা কাজ করেন, তাদের অনেক ঘটনা মনে রাখতে হয়, সে ক্ষেত্রেও এই যন্ত্রটি কাজে আসবে। চাইলেই আবার সে সব স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা যাবে। অন্তত ২৫০ বার যন্ত্রটিতে স্মৃতি জমা রাখা ও মুছে দেওয়ার কাজটি করা যাবে। আর যখন মনে হবে যন্ত্রটির আর প্রয়োজন নেই, সেটিকে সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট করে দেওয়া যাবে।
তবে, এই যন্ত্রটি নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে। স্নায়ুরোগ চিকিৎসক অনিমেষ কর বলেছেন, এমন যন্ত্র আদৌ মানুষের জন্য কার্যকরী হবে কি না, তা পরবর্তী সময়ে বোঝা যাবে। তিনি মনে করেন, স্মৃতি জমা রাখার যন্ত্র কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু মনে রাখার সহজাত ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকবে। মানুষ এখন এমনিতেই যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে এবং মস্তিষ্কের কাজ কমছে, এতে মস্তিষ্কের ধারও কমছে। এর পরেও যদি স্মৃতি ধরে রাখার যন্ত্র চলে আসে, তাহলে স্মৃতিশক্তিই ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকবে।