বাতাসেই মৃত্যুদূত! শরীরে ঢুকেই মস্তিষ্ক, কিডনি, ফুসফুস গিলে খাচ্ছে ‘অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস’

অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস’

কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা কাটতে না কাটতেই এক নতুন আতঙ্কের নাম এখন ‘মারণ ছত্রাক’ অ্যাসপারজিলাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) যাকে ‘মারণ ছত্রাক’-এর তকমা দিয়েছে, সেই অ্যাসপারজিলাস এখন আমেরিকা জুড়ে ছড়াচ্ছে উদ্বেগ। তবে শুধু আমেরিকাতেই নয়, ভারতেও এর সংক্রমণের ঘটনা নতুন নয়। প্রশ্ন উঠছে, এই ছত্রাক কতটা বিপজ্জনক, এর লক্ষণ কী এবং কীভাবে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি?

এক নীরব ঘাতক অ্যাসপারজিলাস:

সাধারণ সর্দি-কাশি বা পেটের রোগের কারণ ছত্রাক নয় এটি। অ্যাসপারজিলাস একবার শরীরে প্রবেশ করলে তা সরাসরি হার্ট, কিডনি এবং ফুসফুসকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, অথবা যারা ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা বা এইডসের মতো রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ছত্রাকের সংক্রমণ প্রাণঘাতী হতে পারে। এর আক্রমণে ফুসফুসের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে রোগী মারাত্মক শ্বাসকষ্টে ভোগেন। বিশেষ করে হাঁপানি বা সিওপিডি-তে আক্রান্ত রোগীরাই এতে বেশি ভোগেন।

আমেরিকায় ছড়াচ্ছে, ভারতেও রয়েছে এর প্রকোপ

নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ইতিমধ্যেই বহু মানুষ এই ছত্রাক ‘অ্যাসপারজিলাম ফিউমিগেটাস’-এর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এ কেবল আমেরিকার সমস্যা নয়।

আমাদের দেশেও অ্যাসপারজিলাসের আক্রমণে অ্যাসপারজিলোসিস নামক এক ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা যায়, যা মূলত ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, এই ছত্রাক মস্তিষ্ক, হার্ট ও কিডনির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।

ভারতে অ্যাসপারজিলাসের সংক্রমণে ‘অ্যালার্জিক ব্রঙ্কোপালমোনারি অ্যাসপারজিলোসিস’ নামক আরেকটি রোগও ছড়াতে দেখা যায়, যা হাঁপানি রোগীদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক। এই ক্ষেত্রে ছত্রাকের রেণু প্রথমে ফুসফুসকে আক্রমণ করে এবং তারপর মস্তিষ্ক, হার্ট ও কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে।

কীভাবে ছড়ায় অ্যাসপারজিলাস?

এক নীরব ঘাতক অ্যাসপারজিলাস

অ্যাসপারজিলাস ছত্রাক উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে দ্রুত জন্মায়। ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্রতা এদের বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ। এই ছত্রাক ‘কোনিডিয়া’ নামক এক ধরনের রেণু বাতাসে ছড়িয়ে দেয়।

শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই রেণু শরীরে প্রবেশ করলেই বিপদ। সরাসরি শ্বাসনালী দিয়ে এটি ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং দ্রুত ফুসফুস জুড়ে বংশবৃদ্ধি শুরু করে, যার ফলে মারাত্মক শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হয়। ভেজা মাটি থেকেও এই ছত্রাকের রেণু ছড়াতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়:

গবেষকরা অ্যাসপারজিলাস থেকে বাঁচতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিচ্ছেন:

  • মাস্ক ব্যবহার: ধুলো-ধোঁয়া বেশি থাকে এমন পরিবেশে অবশ্যই মাস্ক পরুন। এটি ছত্রাকের রেণু শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশে বাধা দেবে।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: বাড়ির চারপাশ এবং বিশেষ করে বাড়ির ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  • বাগান পরিচর্যা: যাদের বাড়িতে বাগান বা গাছপালা আছে, তাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ভেজা মাটিতে ছত্রাক জন্মাচ্ছে কিনা। প্রয়োজনে মাটিতে জীবাণুনাশক স্প্রে করুন।
  • বাতাস পরিশুদ্ধ রাখা: ঘরের বাতাসকে পরিশুদ্ধ রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন অথবা পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করুন।

কোভিড পরবর্তী এই নতুন স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সচেতনতাই সবচেয়ে বড় অস্ত্র। অ্যাসপারজিলাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমরা সুস্থ থাকতে পারি।

RIma Sinha

Rima Sinha is a professional journalist and writer with a strong academic background in media and communication. She holds a Bachelor of Arts from Tripura University and a Master’s degree in Journalism and Mass Communication from Chandigarh University. With experience in reporting, feature writing, and digital content creation, Rima focuses on delivering accurate and engaging news stories to Bengali readers. Her commitment to ethical journalism and storytelling makes her a trusted voice in the field.

Recent Posts