কাকাসন কী, What is Kakasana in Bengali

What is Kakasana in Bengali

যোগব্যায়াম মানব জীবনের জন্য এক অনন্য উপহার। এটি শরীর ও মনের সুস্থতা নিশ্চিত করতে সহায়ক। বিভিন্ন ধরনের যোগাসনের মধ্যে “কাকাসন” একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর আসন।“কাক” শব্দটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ কাক বা পাখি এবং “আসন” মানে বসার ভঙ্গি। এই আসনে শরীর কাকের মতো ভঙ্গিতে স্থির থাকে, তাই এর নাম কাকাসন। এটি মূলত ভারসাম্য এবং একাগ্রতা বৃদ্ধির জন্য উপযোগী এক ধরনের যোগাসন।

কাকাসন একটি হাতের ওপর ভারসাম্য রেখে করা আসন, যা মূলত বাহু এবং কবজির শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই আসনে শরীরের সম্পূর্ণ ওজন হাতের ওপর নির্ভর করে এবং পা দুটো মুড়ে কনুইয়ের ওপর রাখা হয়।এটি অনেকটা কাকের ভঙ্গির মতো। এটি একটি মধ্যম স্তরের যোগাসন এবং নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে সহজে রপ্ত করা যায়।এটি Balancing pose আসনের অন্যতম রূপ।

Balancing pose কী?

ব্যালেন্সিং পোজ হল এক ধরণের শারীরিক ভঙ্গি বা যোগাসন যেখানে শরীরকে একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে ভারসাম্যপূর্ণভাবে ধরে রাখতে হয় যেমন এক পায়ে দাঁড়ানো বা বাহু দিয়ে শরীরকে শূন্যে তুলে ধরা। এই পোজগুলো শরীরকে স্থিতিশীল করে, মনোযোগ উন্নত করে এবং হ্যামস্ট্রিং, কোর ও গ্লুটসের মতো পেশীগুলোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

কাকাসনের ইতিহাস ও উৎস, History and origin of Kakasana

কাকাসন, বা কাকের ভঙ্গির একটি ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস রয়েছে, যা ১৯ শতকের সংস্কৃত গ্রন্থ শ্রীতত্ত্বনিধি এবং মল্লপুরাণে পাওয়া যায়, তবে পূর্ববর্তী মধ্যযুগীয় গ্রন্থগুলিতে এর উল্লেখ নেই।এই ভঙ্গিটি কাকের প্রতীকবাদ রূপান্তর, রূপান্তর এবং আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভারসাম্যকে প্রতিনিধিত্ব করে।

লিপিবদ্ধ ইতিহাসে কাকাসন ১৯ শতকের শ্রীতত্ত্বনিধিতে পাওয়া যায়, যা একটি সংস্কৃত গ্রন্থ যেখানে বিভিন্ন যোগব্যায়ামের ভঙ্গি বর্ণনা করা হয়েছে। এটি মল্লপুরাণেও তালিকাভুক্ত।অনেক সংস্কৃতিতে, কাক হল রূপান্তর এবং পরিবর্তনের প্রতীক। যোগিক প্রেক্ষাপটে, এটি যোগীর যাত্রা এবং জীবনের বৃদ্ধি এবং ভারসাম্যের জন্য প্রয়োজনীয় রূপান্তরের প্রতীক হতে পারে।

হিন্দু ধর্মে, কাককে পূর্বপুরুষের প্রতীক হিসেবে দেখা হয় এবং শ্রাদ্ধ উৎসবে তাদের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য দেওয়া হয়।বৌদ্ধ এবং তিব্বতি সংস্কৃতিতে কাককে ধার্মিকতার রক্ষক দেবতা মহাকালের প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়।যদিও এই সব গ্রন্থে কাকাসনের সুনির্দিষ্ট বিবরণ না থাকলেও, আধুনিক যুগের যোগগুরুদের ব্যাখ্যায় এবং পরে রচিত কিছু গ্রন্থে কাকাসনের স্পষ্ট বিবরণ উঠে আসে।

হঠযোগ ও রাজযোগের মধ্য দিয়ে এই আসনের ভিত্তি গড়ে উঠেছে। এটি ধ্যান ও মনোসংযোগ বৃদ্ধির একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।২০শ ও ২১শ শতকে, যোগাচার্য কৃষ্ণমাচার্য, বি.কে.এস. আয়েঙ্গার, ও পট্টভি জয়িসের মতো যোগগুরুদের মাধ্যমে কাকাসন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পায়।বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের যোগ ক্লাসে এটি একটি জনপ্রিয় ভারসাম্য আসন হিসেবে পরিচিত।

History and origin of Kakasana

কাকাসনের পদ্ধতি, The method of Kakasana

নীচে কাকাসনের পদ্ধতি দেওয়া হল:-

  • প্রথমে বজ্রাসনের ভঙ্গিতে বসতে তারপর দুই হাতের তালু সামনে মাটিতে স্পর্শ করতে হবে।
  • এরপর দুই হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে নিতম্ব ও কোমর উপরে তুলতে হবে।
  • নিতম্ব কিছুটা উপরে উঠলে, পা দুটিকে উপরে তুলে হাঁটুর নিচের অংশ মাটির সমান্তরালে নিয়ে আসতে হবে।
  • তারপর মাথাটি হাঁটু বরাবর এনে কাকের ভঙ্গী তৈরি করতে হবে।

Also checkout: বিপরীত করণী আসনের পদ্ধতি

কাকাসনের ছবি, Kakasana Picture

নীচে কাকাসনের কয়েকটি ছবি দেওয়া হল:-

Kakasana Picture

কাকাসনের শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা, Physical and mental benefits of Kakasana

কাকাসন শুধু শরীরকেই সুস্থ রাখে না এটি মনকেও ভালো রাখে।

কাকাসনের কয়েকটি শারীরিক উপকারিতা নীচে দেওয়া হল:-

  • পেশী শক্তিশালীকরণ: এটি বাহু, কব্জি, কাঁধ এবং পেটের কোর পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে তোলে।
  • শারীরিক ভারসাম্য: এই আসনটি অনুশীলন করার মাধ্যমে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা বাড়ে, যা শরীরের মূল অংশকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
  • নমনীয়তা বৃদ্ধি: কাকাসন মেরুদণ্ড এবং নিতম্বের জয়েন্টগুলিতে নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরের নড়াচড়ার পরিসীমা উন্নত করে।
  • শারীরিক ভঙ্গি: নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে শরীরের অঙ্গবিন্যাস উন্নত হয়, যা মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।
  • আঘাত প্রতিরোধ: শরীরের পেশী ও জয়েন্টগুলিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এটি আঘাত প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।
  • কোর পেশী শক্তিশালী: কাকাসন মেরুদণ্ডের চারপাশের কোর পেশীগুলিকে সক্রিয় করে তোলে, যা মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করে।

কাকাসনের কয়েকটি মানসিক উপকারিতা নীচে দেওয়া হল:-

  • মানসিক চাপ থেকে মুক্তি: কাকাসন অনুশীলন করলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ দূর হয়। মনোযোগ এবং শারীরিক পরিশ্রম মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। এই চাপ উপশম মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিথিলতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
  • মনোযোগ এবং একাগ্রতা বৃদ্ধি করে: কাকাসন করার সময় পুরো শরীরকে সামঞ্জস্য করে ভারসাম্যে রাখতে হয়। এই প্রক্রিয়া মনোযোগ বাড়ায় ও একাগ্রতা বাড়াতে উৎসাহিত করে।
  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে: শরীর যখন নিজের ওজন ধরে রাখতে সক্ষম হয়, তখন আত্মবিশ্বাসে উন্নতি ঘটে। এটি মানসিকভাবে সাহসী ও আত্মনির্ভর হতে সাহায্য করে।
  • মনের প্রশান্তি আনে: শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানসিক অস্থিরতা কমে যায় এবং এক ধরনের অন্তঃশান্তি অনুভব হয়।
  • ভয় কাটাতে সাহায্য করে: প্রথম দিকে কাকাসন করতে গেলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু অনুশীলনের মাধ্যমে সেই ভয় কাটিয়ে ওঠা মানসিক শক্তি বাড়ায়।
  • ধৈর্য ও সহনশীলতা তৈরি করে: এই আসন রপ্ত করতে সময় ও অনুশীলন দরকার হয়। ফলে ধৈর্য ধরে কাজ করার মানসিক শক্তি গড়ে ওঠে।
benefits of Kakasana

কাকাসন কতবার করা উচিত? How often should Kakasana be done?

কাকাসন (কাকের ভঙ্গি) কতবার করতে হবে তার কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই, কারণ এটি নির্ভর করে সময়কাল এবং ধারাবাহিকতার উপর। আপনার প্রতিবার দুই থেকে পাঁচবার শ্বাস নেওয়ার জন্য এই ভঙ্গিটি ধরে রাখা উচিত, শরীরের উপরের অংশের শক্তি বৃদ্ধির উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং এর সুবিধা অর্জনের জন্য নিয়মিতভাবে ৩০ দিন ধরে অনুশীলন করা উচিত।

কাকাসনের সতর্কতা ও নিষেধাজ্ঞা, Warnings and prohibitions of Kakasana

কাকাসনের কয়েকটি সতর্কতা ও নিষেধাজ্ঞা নীচে দেওয়া হল:-

  • গর্ভাবস্থা এবং মাসিকের সময় এই ভঙ্গিটি এড়িয়ে চলুন কারণ এটি পেটের অংশকে সংকুচিত করে।
  • এই ভঙ্গি কব্জির উপর উল্লেখযোগ্য চাপ ফেলে, তাই আঘাত, কার্পাল টানেল সিনড্রোম বা সাম্প্রতিক কব্জির অস্ত্রোপচারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
  • যাদের কাঁধের সমস্যা আছে, যেমন রোটেটর কাফ ইনজুরি বা কাঁধের স্থানচ্যুতি, তাদেরও এই ভঙ্গি থেকে বিরত থাকা উচিত।
  • জয়েন্ট এবং হাড়ের উপর সম্ভাব্য চাপের কারণে, এই ভঙ্গিটি অস্টিওপোরোসিস বা দুর্বল জয়েন্টগুলির জন্য উপযুক্ত নয়।
  • যাদের হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের কাকাসন করা উচিত নয়।
  • যদি আপনার সম্প্রতি অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে, বিশেষ করে কব্জি, কাঁধ বা পেটের অংশে, তাহলে এই ভঙ্গিটি এড়িয়ে চলুন।
  • যাদের মাথা ঘোরার সমস্যা আছে তাদের এই ভঙ্গি করা উচিত নয়।
  • যাদের কনুই, কব্জি, বাহু, কাঁধ, মেরুদণ্ড, নিতম্ব বা গোড়ালিতে শারীরিক দুর্বলতা বা আঘাত রয়েছে তাদের এই ভঙ্গি এড়িয়ে চলা উচিত।

পরিশেষে

কাকাসন একটি চমৎকার যোগাসন যা শরীরের ভারসাম্য ও মানসিক স্থিরতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস, সাহস এবং মনোসংযোগ বৃদ্ধি করে।আজকের ব্যস্ত ও চাপযুক্ত জীবনে কাকাসনের মতো আসনগুলো আমাদের মানসিক শান্তি ও শারীরিক শক্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তাই আমাদের সবার উচিত যোগাসনের অনুশীলন করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন নিশ্চিত করা।আশা করছি আমাদের এই প্রতিবেদনটি আপনাদের পছন্দ হবে। যদি পছন্দ হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনি আপনাদের বন্ধু, আত্মীয় স্বজন ও চেনা পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে পারেন।

Purba Sen

Purba Sen is a passionate content writer and researcher with a keen interest in emerging trends and digital storytelling. She holds a Bachelor of Arts degree from Gauhati University and hails from Dhubri, Assam. Known for her curiosity and love for books, Purba actively explores new and trending topics to deliver insightful and engaging articles for Bengali readers. Her dedication to continuous learning and authentic writing makes her a valuable contributor to the world of digital journalism.

Recent Posts