সুবহানাল্লাহ অর্থ কি? What is the meaning of Subhanallah? Details in Bengali

সুবহানাল্লাহ অর্থ কি?

ইসলাম ধর্মে ব্যবহৃত এক প্রকার জিকির হল তাসবীহ।

ٱللَّهُ ٱللَّهُ لَطِيفٌۢ بِعِبَادِهِۦ يَرْزُقُ مَن يَشَآءُۖ وَهُوَ ٱلْقَوِىُّ ٱلْعَزِيزُ

অর্থ: “আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা, রিযিক দান করেন। তিনি প্রবল, পরাক্রমশালী”।

এটি একাধিক বার পড়া হয় এবং মুসলিমরা ডান হাতের আঙ্গুল বা মিসবাহ ব্যবহার করে হিসাব রাখেন। অনেকে জপমালাও ব্যবহার করে থাকেন হিসাব রাখার জন্য। প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের কথাবার্তায় ‘সুবহানাল্লাহ বলে থাকি? এই তাসবিহের হাকিকত আমাদেরকে জানতে হবে।

অবচেতন মনে সারাক্ষণ তাসবিহমালা জপ করা হলে সেই তাসবিহ প্রাণ পায় না। যদি এর মর্মার্থ অনুধাবন করে পাঠ করা হয় তবে অবশ্যই আমাদের জীবনে এর ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ প্রভাব পড়বে।

‘সুবহানাল্লাহ’ অর্থ কি ? What is the meaning of Subhanallah?

‘সুবহানাল্লাহ’ অর্থ কি ?

‘সুবহানাল্লাহ’ হলো, আল্লাহর তাসবিহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করা। তাসবিহ বলতে সকাল-বিকাল, সালাতে, প্রাত্যহিক কথাবার্তায় আল্লাহর তাসবিহ ‘সুবহানাল্লাহ’ তথা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা।

সুবহান আল্লাহ অর্থ হলো, আল্লাহ তায়ালার পবিত্র সত্তা কোনো প্রকার দোষত্রুটি অথবা অপূর্ণতা কিংবা কোনো মন্দ বৈশিষ্ট্যের অনেক ঊর্ধ্বে; বরং তা এক অতি পবিত্র সত্তা যার মন্দ হওয়ার ধারণাও করা যায় না।

সুবহানাল্লাহ’ র ব্যাখ্যা, Explanation of Subhanallah :

সুবহানাল্লাহ শব্দগুচ্ছের অনুবাদ “আল্লাহ মহান”। সুবহান শব্দের মূল ( سُبْحَان ) শব্দটি এসেছে সাবাহ ( سَبَحَ ) থেকে , যার অর্থ হলো “মহিমান্বিত করা”। সেক্ষেত্রে দেখতে গেলে এর অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহ সব ধরনের অপূর্ণতা ও মিথ্যা থেকে উর্দ্ধে।

 আল্লাহর সব কিছুর মালিক, তিনি সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর পরিপূর্ণতার জন্য তাঁর প্রশংসা করার জন্য সুবহানাল্লাহ বলা হয়। আল্লাহর কোনো মহিমা দেখে বিস্মিত হলে বা আল্লাহর রহমত ও কুদরতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে উক্ত শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়। এইকভাবে, এটি আল্লাহর সবার ঊর্ধ্বে অবস্থানকে বোঝায়।

সহীহ বুখারী, হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, সুবহানাল্লাহি আম্মা ইয়াসিফুন (“আল্লাহ, তারা যা বর্ণনা করে তার অনেক ঊর্ধ্বে”) এবং সুবহানাল্লাহি আম্মা ইউশরিকুন (“তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই”)।

সুবহানাল্লাহ’ র ব্যবহার, Use of Subhanallah :

সুবহানাল্লাহ প্রায়শই ইসলামী প্রার্থনা ( সালাত ), প্রার্থনা ( দুআ ), মসজিদে খুতবা ( খুতবা ) চলাকালীন ব্যবহৃত হয়। কখনো কখনো এটি মুমিনদের দ্বারা সারা দিন জুড়েই উচ্চারিত হয়। কিছু ক্ষেত্রে এই শব্দগুচ্ছটি বিস্ময় প্রকাশ করতেও ব্যবহৃত হয়।

মুসলমানদের প্রার্থনার পরে এবং সারা দিনে ৩৩ বার বাক্যাংশটি বলতে হয়। এর কারণ হলো মুহম্মদ(সঃ) মুসলমানদের শিখিয়েছিলেন যে এটি চারটি তসবিহ্ মধ্যে একটি যা আল্লাহ মুসলমানদের ক্রমাগত বলতে পছন্দ করেন।

সুবহানাল্লাহ’ র ব্যবহার

সুবহানাল্লাহ কখন ও কেন বলবেন? When and why will you say Subhanallah ?

ইসলামী পরিভাষাগুলোর অন্যতম একটি হল ‘সুবহানাল্লাহ’। এর অর্থ ‘আল্লাহ পবিত্র ও সুমহান’। মূলত আল্লাহ তায়ালার গুণাবলী, তাঁর সৃষ্টির কোনো ভালো ও আশ্চর্যজনক বিষয় শুনে বা দেখে এই শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করার প্রচলন রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সমুদ্রপারে নয়ানাভিরাম সুর্যোদয় বা সুর্যাস্ত দেখে “সুবহানাল্লাহ কত সুন্দর দৃশ্য।” বলা যেতে পারে। এছাড়াও বড় ধরণের কোনো দুর্ঘটনা থেকে কেউ যদি রক্ষা পায় তবে বলা যেতে পারে,  “সুবহানাল্লাহ! গাড়িটি দুর্ঘটনাক্রান্ত হলেও যাত্রীরা পুরোপুরি অক্ষত রয়েছেন।”

অর্থাৎ বিস্ময়ের ক্ষেত্রে এই বিশেষ পরিভাষা উচ্চারণ করা যায়।

সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত, Fazilat of Subhanallah :

সুবহানাল্লাহ বলার অনেক ফজিলতও রয়েছে। আল্লাহ্‌ তায়ালার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করার জন্য মুসলিমরা সুবহানাল্লাহ বলে থাকে। জিকির করার সময় সুবহানাল্লাহ বলা হয়। এতে করে, আল্লাহ্‌র প্রতি মনে ভীতি তৈরি হয় এবং আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে মনের মাঝে ইচ্ছে জাগ্রত হয়।

সুবহানাল্লাহ শব্দটি বলার অনেক ফজিলত রয়েছে। জিকির করার সময় সুবহানাল্লাহ বলুন, কিংবা এমনিতেই সুবহানাল্লাহ বলুন, আল্লাহ্‌র মাহাত্ম প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে যদি সুবহানাল্লাহ বলেন, তবে সাওয়াব আপনি পাবেনই। এছাড়াও, সুবহানাল্লাহ বলার কারণে আমাদের জান্নাত যাওয়ার পথ সুগম হবে।

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

‘দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা বলা সহজ, আমলের পাল্লায় অনেক ভারী। আর আল্লাহর কাছেও অধিক পছন্দনীয়। সেটি হলো, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৬)

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন—

‘‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়।’’
سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম।
সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে,

“যদি কেউ সকালে ও সন্ধ্যায় ১০০ বার করে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ বলে, তাহলে কেউ তার থেকে বেশি আমল নিয়ে কেয়ামতের দিন উপস্থিত হতে পারবে না।”

অন্য এক বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে,

“ব্যক্তির গুনাহ যদি সমুদ্রের ফেনার থেকেও বেশি হয়, তাহলেও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন।” – সহীহ মুসলিম ৪/২০৭১, ২৬৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩/১৪১, সুনানুত তিরমিজি ৫/৫১১,

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“যদি কেউ সকালে ও সন্ধ্যায় ১০০ বার করে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ বলে, তাহলে কেউ তার থেকে বেশি আমল নিয়ে কেয়ামতের দিন উপস্থিত হতে পারবে না।”

অন্য এক বর্ণনায়,  উম্মুল মুমিনীন জুআইরিয়্যার (রা.) বলেন,

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজের পরে তাঁকে তাঁর নামাজের স্থানে জিকিরত অবস্থায় দেখে বেরিয়ে যান। এরপর তিনি অনেক বেলা হলে দুপুরের আগে ফিরে এসে দেখেন তিনি তখনও ওই অবস্থায় তাসবিহ তাহলীল আদায় করছিলেন।”

এবিষয় দেখে নবীজি সাল্লাল্লাহু বলেন,

“তুমি কি আমার যাওয়ার সময় থেকে এই পর্যন্ত এভাবেই জিকিরে রয়েছ?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে বেরিয়ে চারটি বাক্য তিন বার করে বলেছি, তাহলো-
سبحان الله وبحمده ، عدد خلقه ، ورضا نفسه ، وزنة عرشه  ومداد كلماته
উচ্চারণ : সুব‘হা-নাল্লা-হি ওয়াবি‘হামদিহী, ‘আদাদা খালক্বিহী, ওয়ারিদ্বা-নাফসীহী, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালিমাতিহী।
তুমি সকাল থেকে এই পর্যন্ত যত কিছু বলেছ সবকিছু একত্রে যে সওয়াব হবে, এই বাক্যগুলির সওয়াব একই পরিমাণ হবে।” – (সহীহ মুসলিম ৪/২০৯০-২০৯১, ২৭২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩/১১০, নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা ১/৪০২, ৬/৪৮, ৪৯)

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন—

‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৪৬৪)
সুবহানাল্লাহ

শেষ কথা, Conclusion :

বিশ্বজাহানের কোনো শক্তিই তাঁর ক্ষমতাকে খর্ব বা সীমিত করতে পারে না। সবাই তাঁর দাস ও প্রজা। মানুষের সৎপথ প্রদর্শনের জন্য তিনি কাকে নবী বানাবেন, একান্তই তাঁর ইচ্ছাধীন। তিনি মহাপবিত্র। অর্থাৎ তাঁর সিদ্ধান্তে ভুল-ত্রুটির কোনো সম্ভাবনা থাকতে পারে না। তিনি ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত ও পবিত্র, তা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts